বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫: প্লাস্টিক দূষণ রুখে বাঁচুক প্রকৃতি
প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের থিম: “Ending Plastic Pollution” — অর্থাৎ প্লাস্টিক দূষণ রোধ করাই মূল লক্ষ্য। ২০২৫ সালে এই বিশ্বমঞ্চের আয়োজক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া।
প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহ পরিসংখ্যান
- বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর তৈরি হয় ৪০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক, যার অর্ধেক একবার ব্যবহারযোগ্য।
- মাত্র ১০% প্লাস্টিকই পুনর্ব্যবহারযোগ্য।
- প্রতি বছর ১.১ কোটিরও বেশি টন প্লাস্টিক নদী, হ্রদ ও সাগরে গিয়ে পড়ে — যা ২,২০০টি আইফেল টাওয়ারের ওজনের সমান।
- প্রতি বছর মাথাপিছু ৭৫ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার হয়, প্রতি মিনিটে ব্যবহৃত হয় ২০ লক্ষ প্লাস্টিক ব্যাগ।
মাইক্রোপ্লাস্টিক: মানুষের শরীরেও থাবা বসিয়েছে
- মাইক্রোপ্লাস্টিক লিভার, কিডনি, প্লাসেন্টা, এমনকি মস্তিষ্কে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে।
- একজন মানুষ বছরে গড়ে ৫০,০০০ প্লাস্টিক কণা গ্রহণ করেন — প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫ গ্রাম।
পরিবেশ রক্ষা বনাম অর্থনীতি: ভুল দৃষ্টিভঙ্গি
পরিবেশ রক্ষার প্রয়াস মানেই যে অর্থনৈতিক ক্ষতি, তা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। গবেষণা বলছে—
- জলবায়ু পদক্ষেপে যে খরচ হয়, তা থেকে ৯ গুণ বেশি লাভ হয়।
- উদ্ভিদ পুনঃস্থাপন প্রতি রুপি বিনিয়োগে ₹২,৫২০ মূল্য ফেরত দেয় পরিবেশগত পরিষেবায়।
- একে অবহেলা করলে খরচ ৩ গুণ বেড়ে যায়।
বনাঞ্চল হারালে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে
- পৃথিবীর অক্সিজেনের ২০% আসে বন থেকে।
- প্রতি বছর ১৫ বিলিয়ন গাছ কাটা হয়।
- প্রতিমিনিটে ২০টি ফুটবল মাঠের সমান বন ধ্বংস হয়।
- ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সব বন নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা।
- ১টি গাছ বছরে ১ টন কার্বন ধরে রাখতে পারে এবং ১০ জনকে অক্সিজেন দেয়।
মণিপুরের বন ধ্বংস ও প্রাকৃতিক সংকট
- ২০২৩ সালে মণিপুরে ১৩.৯ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল হারিয়েছে, যা ৭.৯৭ মিলিয়ন টন CO₂ নির্গমনের সমান।
- পপি ও জুম চাষ বন্ধ করে বন পুনঃস্থাপন জরুরি।
- ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫০ মিলিয়ন হেক্টর জমি পুনরুদ্ধার করলে ২৫ গিগাটন গ্রীনহাউস গ্যাস হ্রাস পাবে।
খাদ্য অপচয় ও পরিবেশে তার প্রভাব
- প্রতি বছর বিশ্বে ১.৩ বিলিয়ন টন খাবার নষ্ট হয়, যা ৩ বিলিয়ন মানুষকে খাওয়ানোর পক্ষে যথেষ্ট।
- এই অপচয় থেকে নির্গত হয় ৪.৪ গিগাটন গ্রীনহাউস গ্যাস।
- মণিপুরের পার্বণ উৎসব ও ভোজে অতিরিক্ত খাবার নষ্ট হয়, যা পরিবেশের জন্য হুমকি।
জলবায়ু পরিবর্তন: মানব সভ্যতার বড় হুমকি
- প্রতি সেকেন্ডে ৪টি পরমাণু বোমার সমান তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্বে।
- জলোচ্ছ্বাস, হিমবাহ গলা, দাবানল, অতিবৃষ্টি, খরা, মহামারির জন্য দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন।
- ২০২৫ সালেই বিশ্বে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
সাগরের অবক্ষয় ও অক্সিজেন সংকট
- সমুদ্র ২৫% CO₂ শোষণ করে।
- ২১০০ সালের মধ্যে সাগরের অম্লতা ১৫০% বাড়বে।
- প্ল্যাঙ্কটনসহ সমুদ্রজ প্রাণী বিলুপ্ত হতে পারে, যারা পৃথিবীর ৬৫% অক্সিজেন তৈরি করে।
পরিবেশের সঙ্গে শান্তিচুক্তি দরকার
বিশ্বের ১০% প্রাকৃতিক বন ২০৩০ সালের মধ্যে হারিয়ে যাবে যদি অবস্থা না পাল্টানো হয়।
আমাদের প্রয়োজন:
- ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর জমি পুনঃস্থাপন ২০৩০-এর মধ্যে।
- বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও কাজের সুযোগ তৈরি।
- মানবজাতিকে টিকে থাকতে হলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
উপসংহার: “একটাই পৃথিবী” — বাঁচানোর দায় আমাদের
এই গ্রহে কোটি কোটি গ্রহ ও গ্যালাক্সির মধ্যে আমাদের পৃথিবী একটাই।
আজকের সিদ্ধান্তেই নির্ভর করছে ভবিষ্যতের জীবন।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫-এ প্রতিজ্ঞা করুন: গাছ লাগান, প্লাস্টিক বর্জন করুন, পরিবেশ বাঁচান।