সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংলাপে অসামান্য অবদানের জন্য সম্মাননা
বিখ্যাত কবি, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার সম্প্রতি ‘দস্তয়েভস্কি স্টার অ্যাওয়ার্ড’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এই পুরস্কার তাঁকে প্রদান করা হয়েছে সাংস্কৃতিক সংলাপ এবং সাহিত্য ঐতিহ্যে তাঁর অসামান্য প্রভাবের স্বীকৃতিস্বরূপ। অভিনেত্রী ও তাঁর স্ত্রী শাবানা আজমি ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি শেয়ার করে এই খবর জানান।
শাবানা আজমি জানান, রাশিয়ান হাউস এই বছর এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি জাভেদ আখতারকে প্রদান করে গর্ব অনুভব করছে। তিনি আরও বলেন, জাভেদ আখতার একজন বিশিষ্ট কবি, গীতিকার ও জনবুদ্ধিজীবী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন।
জাভেদের আগের সম্মান ও অর্জনসমূহ
জাভেদ আখতার হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা চিত্রনাট্যকার হিসেবে বিবেচিত হন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি গীতিকার, কবি এবং চিত্রনাট্যকার হিসেবে অসংখ্য সম্মান অর্জন করেছেন। তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে।
ভারত সরকার তাঁকে ১৯৯৯ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০০৭ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর উর্দু কাব্যগ্রন্থ ‘লাভা’র জন্য তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন, যা ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার। ২০২০ সালে তিনি ‘রিচার্ড ডকিন্স অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন, যেটি অর্জনকারী একমাত্র ভারতীয় তিনি।

সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে তাঁর অবস্থান
জাভেদ আখতার সবসময় সমাজ ও রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্টভাবে মত প্রকাশ করে আসছেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজে সাম্য এবং জননীতি নিয়ে নানা সময়ে মুখ খুলেছেন সামাজিক মাধ্যমে, সংবাদমাধ্যমে কিংবা সাহিত্য অনুষ্ঠানে।
ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে তাঁর মন্তব্য
সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন, বেশিরভাগই পর্যটক, নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই প্রসঙ্গে এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাভেদ আখতার বলেন, দুই দেশের মানুষের মধ্যে প্রকৃত মিলন না ঘটার কারণে দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে বিভেদ রয়ে গেছে। তিনি মন্তব্য করেন যে, যদি ১৯৪৭-৪৮ সালের পর উভয় পক্ষ একসাথে বসে আলাপ করতো, তবে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে অনেক ভুল বোঝাবুঝি দূর হতে পারতো। তবে এখন এই দেরি অনেক বেশি হয়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, সেই সময়ের যারা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, তাঁরা এখন নব্বই বছর বয়সী, এবং তাঁদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এখন আর বেঁচে নেই।
জাভেদ আখতারের এই আন্তর্জাতিক সম্মাননা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি বড় প্রাপ্তি। তাঁর মত সাহসী ও চিন্তাশীল মানুষদের সম্মানিত করা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।