হঠাৎ সুদের হার কমাল আরবিআই, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে বড় পদক্ষেপ

হঠাৎ সিদ্ধান্তে অবাক বাজার

রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) শুক্রবার একটি চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে রেপো রেট ০.৫ শতাংশ এবং ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ১ শতাংশ কমিয়ে দিল। যেখানে বাজার মাত্র ০.২৫ শতাংশ হ্রাসের প্রত্যাশা করেছিল, সেখানে এই দ্বিগুণ হ্রাস স্পষ্টতই আরবিআইয়ের আগ্রাসী নীতির ইঙ্গিত দেয়। এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক অস্থিরতা ও বাণিজ্য সংকটের মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নেওয়া হয়েছে।


ঋণগ্রহীতাদের জন্য স্বস্তির বার্তা

এই সুদের হার হ্রাস সবচেয়ে বেশি উপকারে আসবে নতুন গৃহঋণ আবেদনকারী এবং ভাসমান সুদের (floating-rate) হোম লোনধারীদের। এমনকি কার লোন এবং পার্সোনাল লোন নেওয়া গ্রাহকরাও সুবিধা পাবেন। আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, যদি ব্যাঙ্কগুলি পুরো রেপো রেট কমার সুবিধা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়, তবে ৫০ লক্ষ টাকার ২০ বছরের হোম লোনে বার্ষিক ₹৩৬,৬৮৪ টাকা সাশ্রয় হতে পারে।

তবে ইতিহাস বলছে, ব্যাংকগুলি সাধারণত দ্রুত এই সুবিধা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয় না। বর্তমানে হোম লোনের সুদের হার ৮-৯ শতাংশ, কার লোন ৯-১০ শতাংশ এবং পার্সোনাল লোন ১১-১৪ শতাংশ হারে চলছে। তবে জুলাই থেকে এই হার আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাবলিক সেক্টরের পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB) ঘোষণা করেছে, তারা সোমবার থেকেই হোম লোনের হার ৭.৪৫ শতাংশ এবং কার লোন ৭.৮০ শতাংশ থেকে শুরু করবে।


নীতিগত দিক থেকে বড় পরিবর্তন

শুক্রবারের এই ঘোষণার মাধ্যমে আরবিআই-এর গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা-এর নেতৃত্বাধীন মনিটারি পলিসি কমিটি (MPC) ফেব্রুয়ারি থেকে মোট ১ শতাংশ রেপো রেট কমিয়েছে, যা বর্তমানে ৫.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একইসাথে, সিআরআর-ও এখন ৩ শতাংশে এসে ঠেকেছে, যা ইতিহাসে এক নিম্নতম স্তর।

রেপো রেট হ্রাস মানে, ব্যাংকগুলি আরবিআই থেকে কম খরচে টাকা ধার করতে পারবে, ফলে তারা সহজে এবং কম সুদে ঋণ দিতে পারবে। অন্যদিকে, সিআরআর কমানোর ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে বেশি অর্থ থাকছে, যা তারা ঋণ দিতে ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে চাহিদা ও কর্মসংস্থান বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।


ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্পোরেটদের জন্য সুবিধা

ছোট-মাঝারি ব্যবসা এবং বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলিও এই আগাম নীতিগত সিদ্ধান্তের ফলে উপকৃত হবে, কারণ তাদের ঋণের বার্ষিক সুদের পরিমাণ হ্রাস পাবে। MPC জানিয়েছে, তারা বর্তমান অর্থবর্ষের জন্য মুদ্রাস্ফীতির পূর্বাভাস ৩.৭ শতাংশ এবং FY27-এর জন্য ৪ শতাংশ হিসেবে দেখছে। সেই সঙ্গে তারা তাদের নীতিগত অবস্থান “সহনশীল” (accommodative) থেকে “নিরপেক্ষ” (neutral) করেছে, অর্থাৎ আপাতত আর কোন সুদের হার কমার সম্ভাবনা নেই।

গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা বলেছেন, দেশের প্রকৃত GDP প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করলেও তা প্রত্যাশার তুলনায় কম। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, বিশ্ব পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ ভোগ ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।


ব্যাংকগুলোর প্রতিক্রিয়া

ব্যান্ডহান ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট সিদ্ধার্থ সান্যাল বলেছেন, ব্যাংকগুলোর আর কোনও বিকল্প নেই — তাদের এই হার হ্রাসের সুবিধা গ্রাহকদের দিতে হবে। তবে এর প্রভাব সঞ্চয়কারীদের উপর পড়বে। তার মতে, এই ঘোষণার ফলে ব্যাংকের বহিঃসূত্রভিত্তিক সুদের হার, MCLR এবং জমার সুদের হার সবকিছুই কমবে এবং নীতিগত সুবিধার দ্রুত প্রয়োগ সম্ভব হবে।


বাস্তবতা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

যদিও নীতিগত পরিবর্তন অর্থনীতিকে গতি দিতে সহায়ক হতে পারে, বাস্তবে এর প্রভাব অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। যেমন, শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়বে কিনা, সেটা নির্ভর করে তাদের ভবিষ্যৎ চাহিদা ও আয় প্রত্যাশার উপর। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও বাড়ি বা গাড়ির মত বড় খরচের সিদ্ধান্ত নেওয়া নির্ভর করে তাদের আয় ও চাকরির নিরাপত্তার উপর। গভর্নর মালহোত্রা বলেছেন, তিনি তার কাজ করে ফেলেছেন এবং আশা করেন বাকি পক্ষগুলোও তাদের দায়িত্ব পালন করবে। তার মতে, মুদ্রানীতি একটি প্রয়োজনীয় শর্ত হলেও তা একা যথেষ্ট নয়। সুদের হারের সুবিধা বাজারে পৌঁছাতে গেলে আরও নানা বিষয়ে সমন্বয় দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *