ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রূপকথার রাজ্য মেঘালয় শুধু নামেই নয়, প্রকৃতির রূপে-রসে যেন এক বিশাল মেঘের রাজপ্রাসাদ। পাহাড়ে ঢাকা, ঝরনা ও জলপ্রপাতের কলকল ধ্বনি, আর সবুজ অরণ্যের অদেখা পথ — সব মিলিয়ে এই রাজ্য পর্যটকদের মনে দাগ কাটে। অনেকের কাছে মেঘালয় মানেই চেরাপুঞ্জি, কমলালেবুর সুগন্ধ আর অঝোর বৃষ্টি। যদিও অতিবৃষ্টির শিরোপা আজ চেরাপুঞ্জি থেকে সরে গিয়ে গিয়েছে মৌসিনরামের হাতে, তবুও রাজ্যের বুকে এমন অনেক অজানা পাহাড়ি গ্রাম আছে, যেগুলো এখনো পর্যটন মানচিত্রের মূল ধারায় আসেনি। পুজোর ছুটিতে যদি প্রকৃতির কোলে কয়েকটা দিন কাটাতে চান, তবে এই তিন গ্রাম আপনার তালিকায় রাখতে পারেন।
১. কংথং — সুরের গ্রাম
শিলং থেকে চেরাপুঞ্জির পথে মাওরজং গ্রামে পৌঁছে বাঁদিকে একটি পথ ঘুরে ২৫ কিলোমিটার গেলে দেখা মিলবে কংথং গ্রামের। এই গ্রাম স্থানীয়দের কাছে ‘জিংরেই ইয়াওবে’ নামেও পরিচিত। এখানে প্রতিটি মানুষের জন্মের পর আলাদা এক সুর বা শিসধ্বনি দিয়ে ডাকনাম রাখা হয়, যা আজীবন তাদের পরিচয় হয়ে থাকে। প্রকৃতির নীরবতার মাঝে মাঝে শোনা যায় সেই সুরেলা ডাকে মানুষের খোঁজ নেওয়ার শব্দ। কংথংয়ে থাকার জন্য একটি ছোট কটেজ রয়েছে, যেখানে অতিথিদের আপ্যায়নে গ্রামের মানুষ নিজেরাই এগিয়ে আসেন।
২. ওয়াখেন — বাঁশের পথের গল্প
শিলং থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে আছে ওয়াখেন গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ জলের ওয়ারেউ নদী। এখান থেকে শুরু হয় এক অভিনব ট্রেক, যার পথ পুরোপুরি বাঁশ দিয়ে তৈরি। এই বাঁশের স্কাইওয়াক ধরে প্রায় দুই ঘণ্টা হাঁটলে পৌঁছে যাবেন মাওমোট ভিউপয়েন্টে, যেখান থেকে পাহাড় ও উপত্যকার মনমুগ্ধকর দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। ফেরার পথে নদীর ধারে বসে ঠান্ডা জল পান করতে পারেন, আর চাইলে আগে থেকে বলে স্থানীয়দের তৈরি গরম খাবারের স্বাদও নিতে পারেন।
৩. মইরাং — হ্রদের দোরগোড়ায়
গুয়াহাটি থেকে শিলং পেরিয়ে পৌঁছে যান জমজমাট পাহাড়ি শহর মইরাং-এ। বাজার, দোকানপাট ও স্থানীয় জীবনযাত্রার রঙিন ছোঁয়া এখানে ভ্রমণকারীদের মন কাড়ে। মাওফানলু হ্রদে যাওয়ার প্রধান পথ এই শহর দিয়েই যায়। মইরাং থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে মারকাসা পর্যন্ত গিয়ে, ডানদিকের পথ ধরে পৌঁছবেন নীল-সবুজ জলের ধারে। হ্রদের তীরে টিলার উপর বসে প্রকৃতির নির্জন সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, কিংবা চাইলে মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে কিছু সময় কাটিয়ে দিতে পারেন শান্ত জলের মাঝে।
পাহাড়ি পথের বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকা এই তিন গ্রাম প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য যেন এক স্বর্গীয় ঠিকানা। পুজোর ছুটি যদি প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটাতে চান, তবে মেঘালয়ের এই অজানা রত্নগুলিই হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।