বক্সার পাহাড়ে মিলেট মোমোর জাদু

আলিপুরদুয়ারের বক্সা পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে একটি নতুন স্বাদের আগমনী—ডার্ক ব্রাউন মিলেট মোমো। পর্যটকরা এখন সান্তালাবাড়ির মহিলা পরিচালিত মিলেট মোমো স্টলের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন। ধোঁয়া উঠতে থাকা এই মোমোর স্বাদ গ্রহণ করলেই বুঝতে পারবেন, এটি প্রচলিত মোমোর চেয়ে অনেক ভিন্ন। ময়দার পরিবর্তে তৈরি হওয়া এই মোমো নতুন এক অভিজ্ঞতার সূচনা করে, যা নরম, তুলতুলে এবং মুখে গলে যাওয়ার মতো। মিলেটের সুস্বাদু স্বাদ এবং এর অসাধারণ পুষ্টিগুণ সত্যিই এটি বিশেষ করে তুলেছে।
মোমোর ইতিহাস তিব্বতের এবং এটি উত্তর-পূর্ব ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি সংস্কৃতিতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাধারণত, ময়দা দিয়ে তৈরি ভাপা মোমো সাদা রঙের হয়ে থাকে, তবে বক্সার পাহাড়ের সান্তালাবাড়িতে ‘ডার্ক ব্রাউন মোমো’ এখন এক নতুন ট্রেন্ড তৈরি করেছে। এই বিশেষ মোমোতে গমের পরিবর্তে মিলেট ব্যবহার করা হচ্ছে, যা স্বাদে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর গুণাবলীও প্রদান করছে। এর ফলে অনেক স্থানীয় মহিলা এই মোমো বিক্রি করে একটি ব্যবসা শুরু করেছেন।
কৃষি দপ্তর এবং মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সহযোগিতায়, বক্সা পাহাড়ের নানা অঞ্চলে মিলেট চাষ আবার শুরু হয়েছে। বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৩৫০ একর জমিতে মিলেটের চাষ করা হচ্ছে। কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে, যাতে তারা আরও বেশি ফলন অর্জন করতে পারেন।


সান্তালাবাড়িতে মিলেটের বিপণন ব্যবস্থাকে উন্নত করার লক্ষ্যে একটি মিলেট ওয়েলনেস স্টোর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায়, স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ২৫ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই স্টোরে রয়েছে মিলেটের বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড, যেমন সেলরুটি, নুডলস, পাস্তা এবং বিশেষভাবে জনপ্রিয় মিলেট মোমো। পর্যটকরা এই খাবারের স্বাদ নিতে ভোজন করতে আসেন এবং অনেকেই মোমো প্যাক করে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগ্রহী।
মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সভানেত্রী সুখমতি ঘিসিং মন্তব্য করেছেন, “ডার্ক ব্রাউন মোমোর চাহিদা প্রতি দিন বাড়ছে। এর সাথে আপাতত সেলরুটি, নুডলস এবং পাস্তাও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।” কৃষি দপ্তরের মহকুমা কৃষি অধিকর্তা রজত চট্টোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন, মিলেট অসাধারণ পুষ্টিগুণসম্পন্ন, এবং এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে কৃষকরা উপকৃত হন। স্থানীয় খাবারের মাধ্যমে পর্যটকরা এই খাদ্য উপভোগ করছেন।
কলকাতা থেকে বেড়াতে আসা অলোক মুখোপাধ্যায় জানান, “এর দেখাতে যেমন অপরূপ, স্বাদেও অনেক ভালো। এটি প্রথাগত মোমোর তুলনায় অনেক বেশি সুস্বাদু। কলকাতায় গিয়ে এটি উদ্ধার করতে পারব না, এ চিন্তায় মন খারাপ হচ্ছে।”
এভাবে, মিলেট মোমো বক্সা পাহাড়ে একটি নতুন খাদ্য সংস্কৃতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। এটি কেবল স্থানীয় মহিলাদের জন্য আয়ের একটি সুযোগ সৃষ্টি করছে না, বরং পর্যটকদের মধ্যে স্থানীয় খাবারের জনপ্রিয়তাও বাড়াচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *