৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (কেআইএফএফ) শুরু হতে চলেছে আগামী ৬ নভেম্বর, যার মূল ভাবনা— “Where Cinema Connects The World”। এক সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত, শহরের ২১টি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হবে ৩৯টি দেশের মোট ২১৫টি ছবি, যার মধ্যে ১৩২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৮৩টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও তথ্যচিত্র।
এবারের বিশেষ আকর্ষণ ফোকাস কান্ট্রি পোল্যান্ড। পোলিশ সিনেমার বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে ‘পোলিশ ফোকাস’ বিভাগে থাকছে ১৯টি চলচ্চিত্র। এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে Contemporary Polish Cinema, Polish Great Masters, Animated Shorts, Family Focus এবং Indo-Polish Documentaries ইত্যাদি।
বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হবে কিংবদন্তি পোলিশ পরিচালক ভইচেখ হাস-এর শতবর্ষ উপলক্ষে। প্রদর্শিত হবে তাঁর তিনটি বিখ্যাত ছবি— The Saragossa Manuscript, The Hourglass Sanatorium ও The Doll। পাশাপাশি, কেআইএফএফ-এ আয়োজন করা হয়েছে Polish Film Poster Exhibition, যেখানে পোল্যান্ডের বিখ্যাত পোস্টার শিল্পের সৃজনশীল দিক তুলে ধরা হবে। পোলিশ ইনস্টিটিউট নিউ দিল্লির পরিচালক মালগোরজাতা ওয়েইসিস-গোয়েলবিয়াক জানান, “এই উদ্যোগ পোল্যান্ড ও ভারতের চলচ্চিত্র সংস্কৃতিকে আরও কাছাকাছি আনবে।”
ভারতীয় চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য এবারের উৎসবে আরও এক বিশেষ সংযোজন— ঋত্বিক ঘটকের শতবর্ষ উদ্যাপন। ছয়টি কালজয়ী চলচ্চিত্র— অযান্ত্রিক, বাড়ি থেকে পালিয়ে, মেঘে ঢাকা তারা, কমল গান্ধার, সুবর্ণরেখা ও তিতাস একটি নদীর নাম— প্রদর্শনের পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছে সেমিনার, প্রদর্শনী এবং Ritwik Ghatak Memorial Conversation যেখানে উপস্থিত থাকবেন আদুর গোপালাকৃষ্ণন ও অনুপ সিং।
এছাড়াও শতবর্ষে শ্রদ্ধা জানানো হবে রিচার্ড বার্টন, স্যাম পেকিনপা, সন্তোষ দত্ত, সলিল চৌধুরী ও রাজ খোসলাকে। স্মরণীয় চলচ্চিত্র Sholay-এর পরিচালক রমেশ সিপ্পি দেবেন এবারের Satyajit Ray Memorial Lecture। ফিলিপিনো পরিচালক ব্রিলিয়ান্তে মেন্ডোজা নেবেন একটি বিশেষ মাস্টারক্লাস, এবং প্রদর্শিত হবে তাঁর পাঁচটি ছবি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, ধনধান্য অডিটোরিয়ামে প্রদর্শিত হবে অজয় করের কালজয়ী বাংলা চলচ্চিত্র ‘সপ্তপদী’ (১৯৬১)— এক প্রতীকী সূচনা, যা কলকাতার সিনেমাপ্রেমের ঐতিহ্যকে স্মরণ করাবে। উপস্থিত থাকবেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কোয়েল মল্লিক ও জুন মালিয়া প্রমুখ।
এই উৎসব শুধু চলচ্চিত্র প্রদর্শন নয়, বরং এক সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন— যেখানে ভারত ও পোল্যান্ডের চলচ্চিত্রচর্চা, ইতিহাস ও শিল্প একসঙ্গে মিলিত হবে। কলকাতা আবারও প্রমাণ করবে কেন তাকে বলা হয় ভারতের “সিনেমার রাজধানী”।