নিত্য গাথা উৎসবে ‘পুরুষোত্তম শ্রী রাম’: এক অবিস্মরণীয় সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা

কয়েকদিন আগেই, কলকাতার গী. ডি. বিরলা সভাগারে একটি অসাধারণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান “পুরুষোত্তম শ্রী রাম” অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা এই বছরের নিত্য গাথা উৎসবের একটি বিশেষ দৃষ্টিগোচর বিষয় ছিল। ভারতীয় বিদ্যা ভবন ও জি. এল. মেহতা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই প্রদর্শনী দর্শকদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে।
এই নৃত্যনাট্যটি, কালামণ্ডলম স্বর্ণদীপা-র কোরিওগ্রাফি ও কনসেপ্টের মাধ্যমে ভরতনাট্যম এবং মোহিনিয়াট্টমের একটি চমৎকার সম্মিলনে শ্রী রামের জীবন এবং আদর্শকে নতুন অধ্যায়ে উপস্থাপন করেন। শ্রী রামের জীবন কেবল একটি মহাকাব্যিক কাহিনী নয়, বরং এতে রয়েছে ত্যাগ, সংগ্রাম, প্রেম এবং নৈতিকতার অপরিসীম শক্তি। এই নৃত্যনাট্যটি ছিল সেই শক্তির প্রতিফলন, যা পুরো মঞ্চ জুড়ে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে অনন্য আকারে প্রকাশ পেয়েছিল।


প্রদর্শনীটিতে শ্রী রামের চরিত্রের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে—তার সাহস, সংগ্রাম এবং চিরকালীন আদর্শের কথা। এই গল্পের পাশাপাশি শ্রী রামের জীবনের এমন কিছু বিশেষ মুহূর্তও প্রদর্শিত হয়েছে, যা সাধারণ দর্শকদের মধ্যে খুব একটা পরিচিত নয়।
সথাক্ষী মুখার্জী, শ্রীঞ্জিনী ব্যানার্জী, তৃষা চক্রবর্তী, তাপজা চক্রবর্তী, শ্রীলেখা চ্যাটার্জি, সম্প্রীতি মুখোপাধ্যায়, অভিষিক্তা দাসগুপ্ত, রাহুল দে, চন্দন রায়, তিতান দাস, ইলিনা বসু, সোহিনী দেবনাথ, নয়নিকা পাল, ঐন্দ্রেয়ী মণ্ডল, স্নেহা সাঁতরা, অঙ্কিতা দত্ত, তিয়াশা দাস, সন্নিধি মুখার্জী, শ্রীবালী কর্মকার, বর্ণিতা গুপ্ত, সিদ্ধিমা গাঙ্গোপাধ্যায় এবং কালামণ্ডলম স্বর্ণদীপা মহন্ত—এই শিল্পীরা তাঁদের অসাধারণ নৃত্যের মাধ্যমে শ্রী রামের জীবনকে ধীরে ধীরে চিত্রিত করেছেন। তাঁদের অভিব্যক্তি, নৃত্যভঙ্গি এবং শক্তিশালী উপস্থিতি দেখে দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেছেন।


এই চমৎকার পরিবেশনার পেছনে ছিলেন রাকেশ কুমার ত্রিপাঠী, যিনি অসাধারণ ন্যারেশনের মাধ্যমে শ্রী রামের চরিত্রের গভীরতা এবং জীবনের নৈতিক দিকগুলো দর্শকদের সামনে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন। তার কণ্ঠস্বর মঞ্চে যেন এক জীবন্ত সুরের মতো প্রবাহিত হচ্ছিল, যা পুরো পরিবেশনাকে প্রাণশক্তি যুগিয়েছে।
শ্রী দেবোপম দাসের স্ক্রিপ্ট এবং পরামর্শনায়, পুরো অনুষ্ঠানটি এক শক্তিশালী সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান হিসেবে গড়ে উঠেছে, যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে একটি নতুন পথের সূচনা করা হয়েছে।


চোখ ধাঁধানো ৪০ মিনিটের এই নৃত্যনাট্যটি শুধু শ্রী রামের মহিমা, সাহস এবং সততার কথা বলেনি; বরং দর্শকদের মনে এক গভীর প্রভাব ফেলে গেছে। এই বিশেষ প্রদর্শনীর মাধ্যমে শ্রী রামের জীবন কেবল গল্পের খাঁচায় বন্দি থাকেনি, বরং সেটি মঞ্চে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। দর্শকরা যেন এক অনন্য যাত্রার সূচনা করেছেন, যেখানে ত্যাগ, প্রেম ও আদর্শের উজ্জ্বল শিখা অনাবৃত হয়েছে।
এটা ছিল একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, যা একদিকে দর্শকদের কাছে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছে এবং অন্যদিকে ভারতীয় সংস্কৃতির একটি নতুন দিক তুলে ধরেছে। “পুরুষোত্তম শ্রী রাম” মঞ্চে ছিল একটি অনন্য শিল্পীর সৃষ্টি, যা আবারও প্রমাণ করেছে যে, শিল্প-সাংস্কৃতিক পরিবেশনা কীভাবে একটি চিরাচরিত কাহিনীকে নতুন আভায় প্রকাশ করতে সক্ষম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *