ভাইফোঁটার আদি গল্প থেকে ফোঁটার মানে

ভাইফোঁটা শুধুমাত্র ভাই ও বোনের ভালোবাসার একটি উৎসব নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে বহু প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনি। এক বিশেষ কাহিনীতে বলা হয়েছে, সূর্যদেব ও সংজ্ঞার দুই সন্তান যম এবং যমুনা অনেক দিন পর একত্রিত হন। একদিন যম যমুনার বাড়িতে আসেন, যেখানে যমুনা তাঁকে উষ্ণ সংবর্ধনা দিয়ে ফোঁটা দেন এবং তাঁর মঙ্গল কামনা করেন। যম খুশিতে তখন একটি বর দিতে চান, আর যমুনা প্রার্থনা করেন— যেন এই দিনটি প্রতি বছর সকল বোন নিজেদের ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় পালন করতে সক্ষম হন। এভাবেই এই দিবসটির নামকরণ হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা।

অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনিতে বর্ণিত হয়েছে যে, লক্ষ্মী দেবী স্বামী বিষ্ণুকে পাতাল থেকে মুক্ত করতে বালির কাছে ফোঁটা দেন এবং নারায়ণকে উপহারস্বরূপ ফিরিয়ে আনার প্রার্থনা করেন। এই বিশেষ ঘটনা কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়ায় ঘটে, যা বর্তমানে ভাইফোঁটার দিন হিসেবে পালিত হয়।

ভাইফোঁটায় ফোঁটা দেওয়ার একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম নয়, বরং ভাইয়ের সুখ, দীর্ঘায়ু এবং খারাপ প্রভাব থেকে সুরক্ষার একটি চিহ্ন। এই ফোঁটা দেওয়ার মাধ্যমে বোনেরা তাদের ভাইয়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আশীর্বাদ প্রকাশ করেন।

এই ফোঁটা সাধারণত কিছু বিশেষ উপকরণের মাধ্যমে প্রদান করা হয়, এবং প্রতিটির সঙ্গে একটি বিশেষ তাৎপর্য জড়িত। চন্দনের ফোঁটা মাথাকে শীতল রাখে, মনোযোগকে বাড়িয়ে তোলে এবং মানসিক প্রশান্তি আনার জন্য পরিচিত। এ কারণে অনেক শুভ কাজে চন্দন ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।

অনেক পরিবারের মধ্যে দই দিয়ে ফোঁটা দেওয়ার প্রথাও রয়েছে, কারণ দই শুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। পরীক্ষার আগে মায়েরা প্রায়শই সন্তানের কপালে দইয়ের ফোঁটা দেন, তেমনিভাবে ভাইফোঁটাতেও এটি ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে, নজর লাগা থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কাজলের ফোঁটা দেওয়ার রীতি বিদ্যমান। বিশেষ করে ছোট শিশুদের কপালে কাজল দেওয়ার মাধ্যমে কুনজর দূর করার চেষ্টা করা হয়।

এ বছর ভাইফোঁটা অনুষ্ঠিত হবে ২৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে। তিথি অনুসারে, দ্বিতীয়া তিথি শুরু হবে ২২ অক্টোবর ২০২৫ রাত ৮:১৬ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৩ অক্টোবর ২০২৫ রাত ১০:৪৬ মিনিটে। তবে ভাইফোঁটা দেওয়ার জন্য সবচেয়ে শুভ সময় হবে ২৩ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ১:১৩ মিনিট থেকে বিকেল ৩:২৮ মিনিট পর্যন্ত।

ভাইফোঁটা শুধুমাত্র একটি সামাজিক অনুষ্ঠানই নয়, বরং এটি একটি ঐতিহ্য যা প্রজন্মের পর প্রজন্মে ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরও গভীর ও মজবুত করে তুলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *