বিজয়া রায়ের অবদান: সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে নেপথ্য নায়িকা

সন্দীপ রায়ের স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে, বিজয়া রায় শুধুমাত্র পোশাক পরিকল্পনা বা গানের স্বরলিপি নির্ধারণেই নয়, চলচ্চিত্রের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে অবদান রেখেছেন। তিনি এমনকি চরিত্রের বই নির্বাচন থেকে শুরু করে খাবারের আয়োজন পর্যন্ত সবকিছুতেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

আগন্তুকছবিতে বই নির্বাচন: বিজয়া রায়ের নিখুঁত পরামর্শ

‘আগন্তুক’ ছবির একটি দৃশ্যে মমতাশঙ্করের চরিত্র ‘অনিলা’ উইল নিয়ে আলোচনা করছেন। এই দৃশ্যে কোন বইটি হাতে থাকবে, তা নিয়ে সন্দীপ রায় ও সত্যজিৎ রায় চিন্তিত ছিলেন। তখন বিজয়া রায় পরামর্শ দেন, আগাথা ক্রিস্টির ‘Peril at End House’ বইটি ব্যবহার করতে। তিনি শুধু পরামর্শই দেননি, বইটি বের করে পাতা খুলে দেখিয়েও দেন, কোন অংশে এটি পড়া হবে। পরবর্তীতে ছবিতে সেই বইটি দৃশ্যমান হয়।

সোনার কেল্লাচারুলতায় বিজয়া রায়ের অবদান

‘সোনার কেল্লা’ ছবিতে মুকুল চরিত্রের লাল সোয়েটারটি বিজয়া রায়ের হাতে বোনা। ‘চারুলতা’ ছবিতে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের হাতে তৈরি রুমালটিও তাঁরই সৃষ্টি। এছাড়া, ‘চারুলতা’ ছবির ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে’ গানটির স্বরলিপি নির্ধারণেও বিজয়া রায়ের ভূমিকা ছিল। তিনি কিশোর কুমারের জন্য গানটি গেয়ে পাঠাতেন, যা পরে কিশোর কুমার রেকর্ড করে গানটি গাইতেন।

বিজয়া রায়ের বহুমুখী প্রতিভা

বিজয়া রায় শুধু চলচ্চিত্রের নেপথ্য নায়িকা ছিলেন না, তিনি একজন দক্ষ সংগীতজ্ঞ, লেখিকা এবং শিল্পীও ছিলেন। তার লেখা ডায়েরি ও আত্মজীবনী ‘আমাদের কথা’তে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন, যা সত্যজিৎ রায়ের জীবন ও কর্মকেও আলোকিত করেছে।

বিজয়া রায়ের অবদান শুধুমাত্র তাঁর স্বামী সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের নেপথ্য নায়িকা হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা ও প্রতিভা প্রদর্শন করেছেন। তার নিঃশব্দ অবদান আজও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে অম্লান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *