আইফেল টাওয়ারের থেকেও উঁচু চেনাব রেলসেতু
জম্মু-কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার কউরি ও বক্কল এলাকাকে সংযোগকারী চেনাব রেলসেতুটি বিশ্বের উচ্চতম আর্চ টাইপ রেলসেতু হিসেবে পরিচিত। এই সেতুর উচ্চতা ৩৫৯ মিটার, যা আইফেল টাওয়ারের থেকেও বেশি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১,৩১৫ মিটার এবং এর আর্চ স্প্যান ৪৬৭ মিটার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাশ্মীর উপত্যকার সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের যোগাযোগব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় হলো।
ইতিহাসে নতুন অধ্যায়, মেঘের বুক চিরে চলবে ট্রেন
চেনাব নদীর উপর নির্মিত এই সেতু দিয়ে চলবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। শুক্রবার ভারতের রেল ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচিত হয় যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আনুষ্ঠানিকভাবে এই সেতুর উদ্বোধন করেন। তিনি অনুষ্ঠানে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
মোদীর হাত ধরে উন্নয়নের বার্তা
প্রধানমন্ত্রী জানান, এই প্রকল্প শুধুমাত্র একটি রেলসেতু নয়, এটি কাশ্মীরের উন্নয়নের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠবে। তাঁর মতে, এর মাধ্যমে উপত্যকার মানুষ সারা বছর দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারবেন। একইসঙ্গে তিনি এটাও বলেন যে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে কাশ্মীরকে আরও সুদৃঢ় করা সম্ভব হবে।
উপত্যকার ভাগ্য বদলাবে স্থায়ী রেলসংযোগ
এতদিন পর্যন্ত উপত্যকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের স্থলপথ ছিল শুধুমাত্র শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়ক (৩০০ কিমি), যা তুষারপাতের কারণে অনেক সময় বন্ধ রাখতে হতো। চেনাব সেতুর ফলে সারা বছর চলাচল সম্ভব হবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে এই প্রকল্প অনুমোদন পায় এবং ২০০৪ সালে কাজ শুরু হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে হাওয়ার গতিবেগ বেশি থাকার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে মোদী সরকারের আমলে প্রকল্পটি পুনরায় শুরু হয় এবং ২০২২ সালের অগস্ট মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
প্রথম ঝুলন্ত রেলসেতু অঞ্জির সূচনা
এই দিনই উদ্বোধন করা হয় ভারতের প্রথম ঝুলন্ত রেলসেতু অঞ্জি ব্রিজেরও। এই ব্রিজটি প্রকৌশল কৌশলে বিশেষত্ব দাবি করে। আপাতত বৈষ্ণোদেবী-কাটরা থেকে শ্রীনগরের মধ্যে ২টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলবে বলে রেলমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তাঁরা জানান, এই রেলসংযোগ কাশ্মীরের জন্য শুধুমাত্র যাতায়াত নয়, অর্থনৈতিক এবং পর্যটন ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
চেনাব ও অঞ্জি রেলসেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকার মানুষ অবশেষে পেতে চলেছেন সারা বছরের নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ। এটি শুধু একটিমাত্র প্রকল্প নয়, বরং একটি প্রতিশ্রুতি — উন্নয়নের, একতার, এবং রাষ্ট্রের মূলস্রোতে কাশ্মীরকে আরও জোরদারভাবে যুক্ত করার।