ইউরোপ ডেঙ্গুর আতঙ্কে কাঁপছে—এমন আগে কখনও শোনা যায়নি। তবে ২০২৫ সালে ইউরোপে মোট ৩০৪ জন ব্যক্তি ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হন, যা গত ১৫ বছর ধরে আক্রান্তদের মোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বিদেশি পর্যটকদের বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক সংযোগ—সবকিছুর সমন্বয়ে ইউরোপে ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাঙালি চিকিৎসক ও গবেষকদের সহযোগিতায় পথ খুঁজছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গড়ে তোলা হয়েছে, যার নাম ‘কমব্যাট ডেঙ্গু’। এই প্রকল্পের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছে সুইডেনের নোবেল পুরস্কারজয়ী প্রতিষ্ঠান কারোলিনসকা ইনস্টিটিউট। এতে অংশ নিচ্ছেন বিশ্বের দুই মহাদেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষকরা। ভারতের বাংলার কিছু বিশিষ্ট চিকিৎসকও এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ডা. উজ্জ্বল নিয়োগী (কারোলিনসকা), ডা. স্বরূপ সরকার (WHO), এবং ডা. সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় (AIIMS, কল্যাণী)।
প্রকল্পের দুটি প্রধান লক্ষ্য হল:
- পরীক্ষাগারে মানব মস্তিষ্কের মতো একটি প্রকল্প তৈরি করে ডেঙ্গুর প্রভাবের গভীরে যাওয়া, যাতে বোঝা যায় যে কীভাবে এই ভাইরাসটি মস্তিষ্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের উপর প্রভাব ফেলে।
- ডেঙ্গুর বায়ো মার্কারগুলি চিহ্নিত করা, যার মাধ্যমে রোগীর অবস্থা কতটা গুরুতর হতে পারে তা পূর্বাভাস করা সম্ভব হবে।
কেন ইউরোপে হঠাৎ উদ্বেগ বেড়ে চলছে?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ইউরোপে তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে, যা ডেঙ্গুর বিস্তারকারী মশা, যেমন এডিস ইজিপ্টাই এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস-এর জন্য অত্যন্ত উপযোগী পরিবেশ তৈরি করছে। এর পাশাপাশি, উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে আসা পণ্যসম্ভার ভর্তি কন্টেইনারে জমে থাকা জলে মশার ডিম পাড়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক ও অভিবাসী ডেঙ্গু-prবণ দেশ থেকে ইউরোপে আসার কারণে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে।
ডা. সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, “বাহক মশা এবং মানুষের coexistence এখন ইউরোপে একটি বাস্তবতা। পরিবেশগত পরিবর্তন এই পরিস্থিতির পক্ষে কাজ করছে।”
এক সময় ‘উন্নয়নশীল দেশের রোগ’ হিসেবে অবহেলিত ডেঙ্গু আজ ইউরোপের এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে, এটি সেখানেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গবেষকদের অভিজ্ঞতাই এখন বিশ্বকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে—এবং তাদের মধ্যে বাঙালিদের ভূমিকা সত্যিই গর্বের।