স্বদেশি যুগে তাঁর গান ও কবিতা হয়ে উঠেছিল দেশের তরুণদের প্রেরণা। অথচ সেই জাতীয়তাবাদী কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় আজও থেকে গেলেন প্রাপ্য স্বীকৃতির বাইরে। ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী (৪ শ্রাবণ) ঘিরে কিছু স্থানীয় উদ্যোগ থাকলেও, সরকারি স্বীকৃতি আজও অধরা। অনেক জায়গায় ২১ জুলাই দিনটিই তাঁর জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়।
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়, তাঁর অমর সৃষ্টি ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ গানটি এখনও বিদ্যালয়ের প্রার্থনা সঙ্গীত হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পায়নি। অথচ গবেষকদের মতে, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নিজেও একসময় এই গান গাইতেন।
নদিয়া রাজবাড়ির পক্ষ থেকে জানা গেছে, প্রায় ১১৫ বছর আগে মহারাজ ক্ষৌনিশচন্দ্র রায় গানটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেন। ১৯১০ সালের একটি পত্রালাপেই সেই সাক্ষ্য মেলে, যেখানে দ্বিজেন্দ্রলাল নিজে এই বিষয়ে লিখেছেন। এরপর থেকেই স্থানীয়ভাবে রাজ্যশাসনে গানটির ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু সময়ের নিয়মে বিস্মৃত হয় কবির সেই স্বপ্ন।
১৮৬৩ সালে নদিয়া রাজপরিবারের দেওয়ান কার্ত্তিকেয় চন্দ্র রায়-এর পুত্র হিসেবে জন্ম দ্বিজেন্দ্রলালের। পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিবেশেই বেড়ে ওঠা। প্রবেশিকায় বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে কৃষ্ণনগর গভঃ কলেজ থেকে এফ.এ পাশ করেন এবং পরে কৃষিবিদ্যা পড়তে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন। দেশে ফিরে এলেও সমাজচ্যুতি ও বয়কটের সম্মুখীন হন। তবুও থেমে না থেকে সৃষ্টি করেছেন একের পর এক নাটক ও গান— ‘সাজাহান’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’, ‘রানা প্রতাপ সিংহ’, ‘মেবার পতন’ প্রভৃতি আজও বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।
দুঃখের বিষয়, বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেও নিজ শহর কৃষ্ণনগরেই দ্বিজেন্দ্রলাল আজও উপেক্ষিত। তাঁর নামে নেই কোনও ডাকটিকিট, নেই সরকারঘোষিত ছুটি, নেই পাঠ্যপুস্তকে তাঁর সৃষ্টি। জন্মদিনে প্রভাতফেরি বা আনুষ্ঠানিক কোনও উদযাপনও চোখে পড়ে না। স্কুলগুলোতেও ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ গানটি নিয়মিত শোনা যায় না।
দ্বিজেন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংযুক্তা ভাদুড়ী বলেন, “এই গানটার মধ্যে এক অন্যরকম আবেগ আছে। প্রার্থনায় থাকলে দারুণ হতো।”
স্বপন মৈত্র, রাজ্য টাস্ক ফোর্সের প্রাক্তন সহ সভাপতি ও দ্বিজেন্দ্র পাঠাগারের সম্পাদক জানান, “বাংলাদেশে গিয়ে দেখেছি এই গান নিয়ে কী উন্মাদনা! অথচ এ দেশে সেটাই নেই। স্কুলে অন্তত গানটি ফিরুক।”
জেলা শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশীষ বিশ্বাস জানান, “নদিয়াবাসীর আবেগকে সম্মান জানিয়ে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে অনুরোধ করব, যাতে প্রার্থনায় অন্তত গানটির একটি অংশ রাখা যায় এবং দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মদিন পালন করা হয়।”