আব্বাকে ভুলতে পারেন না ফেরদৌসী রহমান, ৬৬ বছর পেরিয়েও কন্যার চোখে জল

নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গী স্মৃতিরা

৮৪ বছর বয়সে এসে গানে গানে একসময়ের দেশজোড়া জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমান এখন নিঃসঙ্গ জীবন কাটান। বনানীর বাসায় একা থাকেন তিনি। দুই ছেলে রুবাইয়াত ও রাজিন দেশের বাইরে, আর প্রিয় জীবনসঙ্গী প্রকৌশলী রেজাউর রহমান গত বছর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। এক সময়ের প্রাণচঞ্চল জীবনে এখন ছায়া হয়ে পাশে থাকে শুধু স্মৃতিরা।


ফিরে দেখা শিল্পীজীবনের শুরু

প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের মেয়ে হিসেবে ফেরদৌসী রহমান শৈশব থেকেই গানে ডুবে ছিলেন। স্কুলে যাওয়ার আগেই বাবার সঙ্গে মঞ্চে গান গেয়েছেন। যেখানে অন্যদের জন্য ১৮ বছর বয়স না হলে রেডিওতে গান গাওয়ার সুযোগ ছিল না, সেখানে তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সেই সেই বাধা অতিক্রম করেছিলেন। কৈশোরেই তাঁর গ্রামোফোন রেকর্ড বেরিয়েছিল। আধুনিক গান আর ভাওয়াইয়া গানে হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সংগীতের এক অবিস্মরণীয় নাম।


৬৬ বছর পেরিয়েও মনে পড়ে আব্বাকে

১৮ বছর বয়সে ফেরদৌসী রহমান হারিয়েছিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, তাঁর আব্বাকে। ১৯৫৯ সালে মারা যান আব্বাসউদ্দীন আহমদ। সেই থেকে ৬৬ বছর কেটে গেলেও সেই শূন্যতা তিনি আজও বয়ে বেড়ান। জীবনের প্রতিটি সাফল্যের মুহূর্তে তাঁর মনে হয়েছে, যদি আব্বা থাকতেন! বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া, বিলাতে যাওয়া, সিনেমার গানে জনপ্রিয়তা পাওয়া, পুরস্কার পাওয়া—সবকিছুতেই প্রথম যে চিন্তাটা এসেছে তা হলো, এই আনন্দটা যদি আব্বা দেখে যেতে পারতেন।


স্মৃতির কাছে পরাজিত শক্ত মানুষগুলো

এই অনুভূতি শুধু ফেরদৌসী রহমানের একার নয়। বহু মানুষ রয়েছেন, যারা জীবনের বড় বড় অর্জনগুলো মা-বাবাকে দেখাতে পারেননি, সেই কষ্ট বয়ে বেড়ান আজীবন। লেখক নিজেও স্মরণ করেছেন, কিভাবে তাঁর আব্বা মো. মোফাজ্জল হক চলে গিয়েছিলেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই। সেই শোক এখনও দুই ভাই মিলে ভাগাভাগি করেন, চোখের পানি ফেলেন—বয়স ষাট পেরিয়ে গেলেও ‘আব্বা’ বলে কাঁদেন।


আব্বাকে স্মরণ এক অপূর্ব ব্যথা

বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার ওহাবের কথাও এসেছে এই স্মৃতিচারণায়। যিনি যুদ্ধজয়ের পর নিজের ঘরে ফিরেছিলেন, কিন্তু পিতার মৃত্যুর বেদনায় আনন্দ ভুলে গিয়েছিলেন। ছেলেবেলায় বাবার মুখে হাসি ফোটানো, একটুখানি প্রশংসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা—এই সব অনুভূতি জীবনভর আমাদের সঙ্গী হয়ে থাকে।


ঈদ এলে বাড়ে স্মৃতির ভার

পবিত্র ঈদুল আজহার মতো উৎসব আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। কিন্তু যাঁরা মা-বাবাকে হারিয়েছেন, তাঁদের কাছে ঈদ মানে শূন্যতা, স্মৃতিময়তা, প্রার্থনার সময়। বাড়ি ফিরে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে মিলনের সময় মনে পড়ে তাঁদের কথা, যাঁরা আর নেই। তাঁদের জন্য চলে ম silently প্রার্থনা।


উপলব্ধির আহ্বান

এই লেখা তাঁদের জন্য, যাঁরা এখনো মা-বাবার সান্নিধ্যে আছেন। তাঁদের সময় দিন, ভালোবাসা দিন। কারণ একবার হারিয়ে গেলে সেই সম্পর্ক শুধু স্মৃতি হয়ে থাকে, থেকে যায় এক গভীর হাহাকার হয়ে। আর যাঁদের মা-বাবা নেই, তাঁদের জন্য ঈদ শুধু উৎসব নয়, প্রার্থনারও দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *