ভারতীয় রান্নাঘরে একটি বহুল প্রচলিত প্রশ্ন হল – ঘি নাকি ভেজিটেবল অয়েল, কোনটি হৃদ্স্বাস্থ্যের পক্ষে অধিক উপকারী? ঐতিহ্যগতভাবে ঘির প্রতি আকর্ষণ যেমন রয়েছে, তেমনই বর্তমান স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে অনেকেই ভেজিটেবল অয়েলের দিকে ঝুঁকছেন। প্রকৃত পক্ষে, এই দুই ধরনের চর্বিরই সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে, এবং মূল বিষয় হল প্রতিটি তেলের পরিমাণ এবং আমাদের জীবনযাত্রার পদ্ধতি কী।
ঘি-তে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে, যা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে LDL বা “খারাপ কোলেস্টেরল” বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যদিকে, সর্ষে, অলিভ, রাইস ব্র্যান এবং সূর্যমুখী তেলের মতো তেলে অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা রক্তনালিকে নমনীয় রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর। তাছাড়া, যদি পরিমাণে সীমিতভাবে গ্রহণ করা হয়, ঘি-ও উপকারী হতে পারে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং হজমে সহায়ক উপাদান, যা শরীরকে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদও ঘি-কে রোগপ্রতিরোধে সহায়তাকারী হিসেবে মান্য করে, তবে যাদের কোলেস্টেরল বা ওজন বেশি, তাদের জন্য এর ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা রাখা উচিত।
হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষায় অলিভ, সর্ষে এবং রাইস ব্র্যান তেল বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়, কারণ এগুলোর মধ্যে ভালো ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি রয়েছে। সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেলও উপকারী হতে পারে, তবে এগুলো বারবার গরম করা উচিত নয়, কারণ এতে তেলের গুণাগুণ হারিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, তেল বা ঘি যাই ব্যবহৃত হোক, তার পরিমাণ অতিরিক্ত হলে সেটাই আসল সমস্যা সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত তেল খেলে শরীরের ওজন, কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিদিন ২ থেকে ৩ চামচ তেল বা ঘি গ্রহণ করা অপর্যাপ্ত।
সবকিছু বিবেচনা করলে, কোনটি সঠিক তা এক কথায় বলা কঠিন। স্বাদের জন্য ঘি ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এটি মাত্রাতেই খাওয়া উচিত। সাধারণ রান্নার ক্ষেত্রে হৃদ্বান্ধব তেল যেমন সর্ষে, জলপাই বা রাইস ব্র্যান বেছে নেয়া উচিত। একই তেল দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের পরিবর্তে প্রতি ২-৩ মাস অন্তর পরিবর্তন করা ভালো। পাশাপাশি সুষম খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যপরীক্ষা চালিয়ে গেলে হৃদ্স্বাস্থ্য আরও উন্নত হবে। শেষ কথা হলো, তেলের গুরুত্বের চেয়ে সঠিক অভ্যাসই আপনার হৃদয়ের রক্ষা করবে।