দুর্গাপূজোর একমাত্র নয়, বাঙালি হেমশৈলীর উৎসবের একটি নিমেষ—জগদ্ধাত্রী পুজো। মূলত কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে উদ্যাপিত এই পূজায় দেবী জগদ্ধাত্রী কে পূজার মাধ্যমে স্মরণ করা হয়, যিনি ব্রহ্মাণ্ডের ধারক, দেবতাদের অহংকারভঙ্গকারী এবং মানব জীবনের গভীর দার্শনিক প্রতীক।
কবে উদ্যাপন হচ্ছে এই বছর?
এই বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচি নিম্নরূপ:
- ২৬ অক্টোবর ২০২৫ (সোমবার): ষষ্ঠী
- ২৭ অক্টোবর ২০২৫ (মঙ্গল): সপ্তমী
- ২৮ অক্টোবর ২০২৫ (বুধবার): অষ্টমী
- ২৯ অক্টোবর ২০২৫ (বৃহস্পতিবার): নবমী
তবে পঞ্জিকার দ্বিধাজনক অবস্থার কারণে নবমী–দশমীর দিন নির্ধারণ নিয়ে কিছু সংশয় তৈরি হয়েছে। কিছু সূত্র অনুযায়ী ৩০ অক্টোবর নবমী এবং ৩১ অক্টোবর দশমী হওয়ায়, অন্য সিলেবাস অনুযায়ী সূর্যোদয়ের পর নবমী থেকে দশমী রূপান্তর ঘটতে পারে। এই ধরনের সময়সূচি দ্ব্যর্থহীন না হলেও উৎসবীরা সাধারণত ৩১ অক্টোবর দিনটিকে মূল নবমী ও বিসর্জনের দিন হিসেবে দেখে থাকেন।
কে এই দেবী জগদ্ধাত্রী?

হিন্দু পুরাণ মতে, দেবী দুর্গার বিজয়ের পরে দেবতাদের মধ্যে হয় গর্ব ও অহংকার। তাঁদের মনোবল পরীক্ষা করতে ব্রহ্মা এক নারীর রূপে দেবী জগদ্ধাত্রীকে সৃষ্টি করেন। মহিষাসুরের বধ যুদ্ধে দেবতাদের কৃতিত্ব দাবি করায় জগদ্ধাত্রী এক তৃণ দ্বারা সেই দাবি চ্যালেঞ্জ করেন এবং তাঁর একমাত্র এক হাতেই তৃণখণ্ড স্থির করতে সক্ষম হন—প্রমাণ করে যে দেবতারা একভাবেই মানুষের ও জগতের অতীতশক্তি। সিংহ আর হস্তিমুণ্ডের ওপর নির্বাহী রূপে বিশিষ্ট দেবী জগদ্ধাত্রী এক অসম্ভব দৃশ্যের প্রতীক।
কোথায় সবচেয়ে উৎসব?
উত্তরবঙ্গের হুগলি জেলার চন্দননগর ও নদিয়ার কৃষ্ণনগর শহরগুলোতে চারদিন ধরে বিশাল আয়োজনে উদ্যাপিত হয় এই পুজো। রেল–সেতু–নদীর তীরে থিমভিত্তিক মণ্ডপ, ভোগ, ডেকোরেশন ও আনন্দময় প্রকাশনায় প্রতিযোগিতার মতো উৎসব হয়। অন্যান্য এলাকায় একদিনেই নবমীর অনুষ্ঠানে একত্রিত হয় ভক্ত–শিল্পী–দর্শক।
আচার-অনুষ্ঠান ও রীতি
- পূজার পূর্বে বাড়ি–আঙিনা পরিষ্কার করা হয়।
- ধান–শিষ, পদ্মফুল ও চালগুঁড়োর সাদা রং দিয়ে আলপনা আঁকা হয়।
- দেবীর চার হাত, সিংহ বসন ও হস্তিমুণ্ডের প্রতীকী অনুকরণ রয়েছ—মহিষাসুরের বধের পরে অহংকার ভঙ্গের প্রতীক।
- এক বিশেষ আচারে “ভোগ” হিসেবে থাকে নারকেল–চিঁড়ের ডাল, মোয়া–সিন্নি, লুচি–খিচুড়ি ইত্যাদি।
- রাতের দিকে প্রদীপ জ্বালানোর রীতি রয়েছে—ব্যথা, গ্লানি থেকে মুক্তি ও দেবীর করুণা লাভের জন্য।
এককথায়, জগদ্ধাত্রী পুজো শুধু এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়—এটি একটি দার্শনিক বিবেচনায় নারীশক্তির প্রতি শ্রদ্ধা, অহংকার ভঙ্গ এবং সমৃদ্ধির শুভসংকেত। প্রতিবার নতুন চেতনায় এই উৎসবের মঞ্চে দাঁড়ায় বাঙালির সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আলোচনায় এক অনন্য সংমিশ্রণ।