দুর্গাপূজার পর অশ্বিন পূর্ণিমার রাতে অনুষ্ঠিত হয় কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা। এদিন বিশ্বাস করা হয়, মা লক্ষ্মী পৃথিবীতে বিচরণ করেন এবং যেসব ঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও প্রস্তুত থাকে, সেখানেই তিনি প্রবেশ করেন সমৃদ্ধি, শান্তি ও সৌভাগ্যের আশীর্বাদ নিয়ে।
আমাদের পরিবারের শিকড় পূর্ববঙ্গের, তাই ‘লক্ষ্মী পুজো’ আজও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসা এক অমূল্য ঐতিহ্য। সকালে বাড়ি পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে ধানের শিষ ও পদ্মফুলের নকশা আঁকা আলপনা, মাটির প্রদীপ জ্বালানো, সবই এই পূজার অপরিহার্য অংশ। আমরা প্রতিমা নয়, ‘সরা’য় আঁকা রঙিন মা লক্ষ্মীর প্রতিচ্ছবাকে পূজা করি। নারায়ণকেও একসঙ্গে পূজিত করা হয়।
পুজোর অন্যতম বিশেষ রীতি হলো লক্ষ্মী পঞ্চালি পাঠ, যেখানে মা লক্ষ্মীর কাহিনি ও তাঁর আশীর্বাদের কথা বর্ণিত হয়। মা ও পিসিমারা একত্রে পাঠ করেন, আর সাদা-লাল পাড়ের শাড়ি পরে পূজায় অংশ নেন। পুজোর পর আমাদের বাড়িতে নারীরা মাছ খান, যা সুস্বাস্থ্য ও দাম্পত্য সুখের প্রতীক বলে মনে করা হয়।
খাবারের দিক থেকেও এ পূজা সমৃদ্ধ। সাতে প্রকার নারু—নারকেল, চিঁড়ে, তিল, গুড়ের সঙ্গে মুড়কি, মোয়া, সিন্নি ইত্যাদি প্রস্তুত হয়। পাশাপাশি থাকে খিচুড়ি, লুচি, লাবড়া, চোলার ডাল, টমেটো-খেজুর চাটনি ও সুস্বাদু পায়েশ। এই ভোগ শুধু আহার নয়, দেবীর আশীর্বাদস্বরূপ প্রসাদ, যা পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগ করে খাওয়া হয়।
রাতে প্রদীপ জ্বেলে জেগে থাকার রীতি রয়েছে। কারণ, বিশ্বাস করা হয় যে জেগে থাকা পরিবারকে মা লক্ষ্মী বিশেষ আশীর্বাদ করেন। উচ্চ শব্দ এড়িয়ে কেবল শঙ্খধ্বনি বাজানো হয়, যাতে পরিবেশ থাকে শান্ত ও ভক্তিময়।
প্রতি বছর এই পুজো শুধু ধর্মীয় আচার নয়, আমাদের পরিবারের মিলনক্ষেত্রও বটে। আলপনা, প্রদীপ, পঞ্চালি আর ভোগের মাধ্যমে আমরা একদিকে দেবীকে সম্মান জানাই, অন্যদিকে ঐতিহ্য, মিলন আর সমৃদ্ধির উৎসব উদযাপন করি।