সব শিল্পী আলোয় দাঁড়ান না—কেউ কেউ নিঃশব্দে, আত্মস্থ হয়ে তাঁদের ছাপ রেখে যান। ঠিক যেমন মমতা শঙ্কর। শব্দের চেয়ে স্পর্শ বেশি কার্যকর যখন, তখন তাঁর কাজই হয়ে ওঠে আত্মপ্রকাশের মাধ্যম।
একটি গৌরবময় শিল্পী পরিবারে জন্ম নেওয়া সত্ত্বেও, মমতা কখনো প্রচারের আলো খোঁজেননি। বরং সৃজনশীলতা, সৌন্দর্য ও সততার ছন্দে গাঁথা করেছেন নিজের শিল্পজীবন। তাঁর বাবা-মা, উদয় শঙ্কর ও অমলা শঙ্কর, ছিলেন ভারতের নৃত্যাঙ্গনের পথিকৃৎ, আর কাকা রবিশঙ্কর ছিলেন বিশ্বখ্যাত সেতার বাদক। দাদা আনন্দ শঙ্করের কথা না বললেই নয়—ফিউশন নৃত্যে তাঁর অবদানও অনস্বীকার্য।
মমতা শঙ্করের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৭৭ সালে মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’ ছবির মাধ্যমে। এরপর সত্যজিৎ রায়, গৌতম ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো বরেণ্য পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, সত্যজিৎ রায়ের শেষ তিনটি ছবি—‘গণশত্রু’, ‘শাখা প্রশাখা’ ও ‘অগান্তুক’-এ তাঁর অনবদ্য অভিনয়।
তবে শুধু রুপালি পর্দাতেই নয়, মঞ্চেও তিনি সমান দক্ষ। একজন সুদক্ষ নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার হিসেবে তাঁর আলাদা পরিচিতি রয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘উদয়ন – মমতা শঙ্কর ডান্স কোম্পানি’, যার নৃত্যনাট্য আজ বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রশংসিত। এই প্রতিষ্ঠানে উদয় শঙ্করের অনন্য নৃত্যশৈলীর সঙ্গে ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের সম্মিলন শেখানো হয়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এখানে আর্থিকভাবে দুর্বল শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য শুধু নৃত্য শেখানো নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয় ঐতিহ্য এবং মানবিক মূল্যবোধ গেঁথে দেওয়া।
সম্প্রতি, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁকে শিল্পক্ষেত্রে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছেন—যা বাংলার গর্বের এক অনন্য মুহূর্ত।
এই মহান শিল্পীকে জানাই হৃদয় থেকে অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা। তাঁর নীরব কণ্ঠে উচ্চারিত সৃজনশীলতার প্রতিধ্বনি যুগের পর যুগ বয়ে চলুক।