ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে দেশপ্রেমের প্রতীক হয়ে ওঠা অভিনেতা মনোজ কুমারের আজ জন্মবার্ষিকী। ‘ভারত কুমার’ নামে জনপ্রিয় এই অভিনেতা শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, পরিচালক, লেখক এবং চলচ্চিত্র পরামর্শদাতা হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। চলতি বছর ৪ এপ্রিল, ৮৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আজ তাঁর প্রথম জন্মবার্ষিকী মৃত্যুর পর। তাঁকে স্মরণ করল বলিউড, বিশেষ করে সেই সময় যখন মনোজ কুমারের এক পরামর্শ বদলে দিয়েছিল অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা-ভাগ্য।
‘ডন’ ছবির মোড় ঘুরিয়েছিলেন মনোজ!
সত্তরের দশকের শেষদিকে নির্মিত ‘ডন’ সিনেমা ছিল একটি থ্রিলারধর্মী গল্প। পরিচালক চন্দ্র বারবার চেয়েছিলেন ছবির গতিকে টানটান রাখতে, কিন্তু মনোজ কুমার ছবিটি দেখে বলেছিলেন— দর্শকদের জন্য এই সিনেমা খুব কঠিন হয়ে উঠছে। সিনেমায় কিছু “বিনোদনমূলক স্বস্তি” দরকার। ঠিক তখনই তাঁর দেওয়া পরামর্শে ‘খাইকে পান বানারসওয়ালা’ গানটি ছবিতে সংযোজিত হয়।
এই গান শুধু একটা গান ছিল না, হয়ে উঠেছিল কাল্ট! অমিতাভ বচ্চনের নতুন লুক, রোমহর্ষক নাচ, কিশোর কুমারের কণ্ঠ আর জিনাত আমানের উপস্থিতি — এই গান মুহূর্তে দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেয়। বহু দর্শক শুধু এই গান দেখতেই বারবার হলে ফিরে যান। সিনেমাটির ব্যবসায়িক সাফল্যে এই গানের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
‘ডন’ সিনেমার সাফল্য এবং ইতিহাস
১৯৭৮ সালের ১২ মে মুক্তি পায় ‘ডন’। মাত্র ৭০ লক্ষ টাকার বাজেটে তৈরি হলেও সিনেমাটি আয় করে ৭ কোটি টাকা — যা তখনকার হিসেবে বিশাল সাফল্য। অমিতাভ বচ্চনের দ্বৈত চরিত্র, জিনাত আমান, প্রাণ, ইফতিখার, ম্যাক মোহনদের অভিনয়— সব মিলিয়ে ‘ডন’ হয়ে ওঠে ওই দশকের অন্যতম ব্লকবাস্টার।
এই সিনেমার প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে, ২০০৬ সালে শাহরুখ খানকে নিয়ে তৈরি হয় এর রিমেক। বর্তমানে দর্শক অপেক্ষা করছেন ‘ডন ৩’-এর জন্য, যেখানে দেখা যেতে পারে রণবীর সিং ও কিয়ারা আদবানিকে।
মনোজ কুমার: শুধু অভিনেতা নন, দেশের কণ্ঠস্বর
মনোজ কুমার ছিলেন সেই অভিনেতা, যিনি প্রতিটি সিনেমায় দেশপ্রেমকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ‘উপকার’, ‘পূরব ও পাশ্চিম’, ‘রোটি কপড়া অউর মকান’, ‘ক্রান্তি’— এসব ছবিতে শুধু অভিনয় নয়, সমাজ ও দেশের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতাও ফুটে উঠেছে।
তিনি বারবার বলেছিলেন, “সিনেমা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, দেশের উন্নয়ন ও চিন্তাধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমও হতে পারে।”
জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা
মনোজ কুমারের মৃত্যু চলচ্চিত্রজগতে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে। তবে আজ তাঁর জন্মদিনে আমরা মনে করি সেই মুহূর্তগুলিকে, যখন তিনি শুধু পর্দায় নয়, পর্দার পেছনেও বদলে দিয়েছেন একজন কিংবদন্তির ভাগ্য।
হয়তো তাঁর পরামর্শ না থাকলে, ‘খাইকে পান’ গানটি আজ থাকতই না — আর ‘ডন’-এর সেই কাল্ট রূপও তৈরি হতো না।
মনোজ কুমার, আপনি ছিলেন ‘ভারত কুমার’। আজও আপনি রয়ে গেছেন সিনেমার পরতে পরতে।
আপনাকে প্রণাম।