মাইকেল মধুসূদনের পদচিহ্নে পঞ্চকোট: পাহাড়ের বুকে কবিস্মৃতি

পুরুলিয়ার মাটিতে যেদিন প্রথমবার পা পড়েছিল মাইকেল মধুসূদন দত্তের, তখনও সেখানে রেলের দাগ পড়েনি। ১৮৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাওড়া থেকে বরাকর পর্যন্ত ট্রেনে এসে, সেখান থেকে পাল্কিতে করে দীর্ঘ ৭৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছিলেন এই পাহাড়ি জনপদে—একটি আইনি মামলার কাজে।

তাঁর আগমন শুধুই আইনি কাজেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। স্থানীয় খ্রীস্টান চার্চের আহ্বানে ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় রচিত হয়েছিল একাধিক কবিতা। ‘পুরুলিয়া’ নামাঙ্কিত সনেটটি, যা সেই সময়ে ‘জ্যোতিরিঙ্গন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, বাংলা সাহিত্যে ‘পুরুলিয়া’ শব্দের প্রথম প্রামাণ্য ব্যবহার বলেই ধরে নেন গবেষকেরা।

মধুসূদনের উপস্থিতিতে তখনকার পুরুলিয়ায় সৃষ্টি হয়েছিল সাহিত্যিক আন্দোলন। চার্চের আমন্ত্রণে ‘ধর্মপুত্র’ নামের আর একটি সনেট রচনা করেন তিনি। আবার ফিরে আসেন মহারাজা নীলমণি সিংহদেওয়ের আমন্ত্রণে, মামলার পরামর্শদাতা হিসেবে।

তবে রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে সেই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। একটি মামলায় হেরে যাওয়ার পর মহারাজা মনে করেছিলেন, ব্যারিস্টার মধুসূদন যথেষ্ট নিষ্ঠা দেননি। যদিও জানা যায়, ওই মামলাটি মধুসূদন তুলে দিয়েছিলেন সে সময়ের খ্যাতনামা ব্যারিস্টার টি অ্যালেন-এর হাতে। তবুও ফল আশানুরূপ হয়নি।

সেই সময়ে লিখিত ‘পঞ্চকোট গিরি’, ‘পঞ্চকোটস্য রাজশ্রী’ এবং ‘পঞ্চকোট-গিরি বিদায় সঙ্গীত’ নামের তিনটি সনেট এখনো পঞ্চকোটের আদি আবেগ বহন করে চলে। বর্তমানে ‘অমিত্রাক্ষর’ নামের একটি সংগঠন কবির স্মৃতিকে সংরক্ষণে কাজ করে চলেছে।

তাদের মুখপাত্র জগন্নাথ দত্ত জানান, “পঞ্চকোট শুধু মামলার মাঠ ছিল না, ছিল মধুসূদনের আত্মদর্শনের ক্ষেত্র। তিনি এই ভূমিকে নিজের মনে করেছিলেন বলেই এমন আবেগময় বিদায় সঙ্গীত রেখে যেতে পেরেছেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *