ভ্রমণের কথা শুনলেই চোখে যেন এক অন্য জগতের ছবি ভেসে ওঠে। ভারতবর্ষে এমন মানুষ খুবই কম, যারা ঘুরতে ভালোবাসেন না। গ্রীষ্ম, শীত বা বর্ষা—মৌসুম যাই হোক না কেন, অনেকেই একটি সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন নতুন গন্তব্যের খোঁজে। কেউ পাহাড়ের নিসর্গে মুগ্ধ হন, কেউ আবার সমুদ্রের বুকে সূর্যাস্ত দেখতে ভালোবাসেন।
তবে গ্রীষ্মকাল পড়তেই, পাহাড়ি এলাকাগুলিতে পর্যটকদের ভিড় স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। কিন্তু এখন যেহেতু বর্ষা মরশুম শুরু হয়েছে, তাই কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। বর্ষাকাল প্রকৃতিকে এক অনন্য রূপ দেয় ঠিকই, কিন্তু একইসঙ্গে কিছু জায়গায় যাতায়াত বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। পাহাড়ি অঞ্চলে ধস নামা বা আকস্মিক বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে জীবন ও সম্পত্তি—দুটিরই ঝুঁকি তৈরি হয়। শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয় পর্যটকদের।
এই প্রতিবেদনে আমরা এমন কয়েকটি জায়গার কথা বলব, যেগুলি বর্ষাকালে এড়িয়ে চলা একান্ত প্রয়োজন।
১. আসাম:
উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্য বর্ষায় প্রবল বৃষ্টিপাতে প্রায়ই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রতিবছরই এখানে ধস ও বন্যার ঘটনা ঘটে। বৃষ্টির কারণে একদিকে যেমন রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়, তেমনই বিভিন্ন এলাকায় জল ঢুকে পড়ে। এর ফলে স্বাভাবিক যাত্রা একেবারে অসম্ভব হয়ে ওঠে।
২. কেদারনাথ:
উত্তরাখণ্ডের অন্যতম পবিত্র স্থান কেদারনাথ প্রতি বছর লক্ষাধিক তীর্থযাত্রীকে আকৃষ্ট করে। যদিও মে মাসে মন্দিরের দরজা খোলা হয়, তবুও বর্ষার সময় এখানে যাত্রা একেবারেই নিরাপদ নয়। ২০১৩ সালের স্মৃতি এখনো অনেকের মনে জাগ্রত। পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে ধস ও প্লাবনের ঘটনা বারবার ঘটে। ফলে এই সময়ে কেদারনাথ বা বদ্রীনাথ ঘোরার পরিকল্পনা বাতিল করাই ভালো।
৩. সিমলা:
হিমাচল প্রদেশের অন্যতম জনপ্রিয় হিল স্টেশন সিমলা। বর্ষাকালে সিমলার প্রাকৃতিক রূপ আরও মোহময় হয়ে ওঠে। কিন্তু সমস্যা হল, এই সময় রাস্তাগুলি ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কোথাও ধস, কোথাও রাস্তা ধ্বসে পড়ে—যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। নদী-খাল উপচে পড়লে বন্যার আশঙ্কাও থাকে। ফলে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এটি বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
৪. কেরালা:
‘গডস ওন কান্ট্রি’ নামে পরিচিত কেরালা তার সবুজ বনাঞ্চল, ব্যাকওয়াটার এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। কিন্তু বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির কারণে এখানে বন্যার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। এমনকি স্থানীয়রাও সমস্যার মুখোমুখি হন। পর্যটকদের জন্য এই সময় কেরালা ঘোরার পরিকল্পনা পুরোপুরি বাতিল করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৫. মুসৌরি:
‘পাহাড়ের রানি’ নামে পরিচিত মুসৌরি সারা বছর পর্যটকের আনাগোনায় সরগরম থাকে। কিন্তু বর্ষার দিনে এখানে রাস্তাগুলি ভীষণ পিচ্ছিল হয়ে যায়। পাহাড় থেকে ধসে পড়া মাটি ও পাথরের কারণে যাত্রাপথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গাড়ি দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। তাই এই সময় মুসৌরি এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
৬. ঋষিকেশ:
উত্তরাখণ্ডের আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ঋষিকেশ। গঙ্গার ধারে এই শান্ত শহর সাধনা ও অ্যাডভেঞ্চারের মিলনস্থল হলেও, বর্ষায় এর রূপ বদলে যায়। অতিবৃষ্টির কারণে হঠাৎ গঙ্গার জলস্তর বেড়ে যায় এবং প্লাবনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন রিভার রাফটিং, ক্যাম্পিং ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যায়। তাই ভ্রমণের জন্য এই সময়টি আদর্শ নয়।
প্রকৃতি অবশ্যই অপার সৌন্দর্যের আধার, কিন্তু বর্ষার দিনে কিছু জায়গা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। একটু ভুল পরিকল্পনাই আপনার স্বপ্নের সফরকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করতে পারে। তাই নিরাপদ ভ্রমণের জন্য সময় ও স্থান বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।