ইচ্ছে থাকলেই বয়স বাধা নয়: মা-মেয়ের একসঙ্গে স্নাতক হওয়ার অনুপ্রেরণামূলক গল্প

ইচ্ছে থাকলেই বয়স বা অন্য কোনও প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয়—এটি প্রমাণ করেছেন পুরুলিয়ার বলরামপুরের এক গ্রামের মা ও মেয়ে। নাবালিকা বয়সে বিয়ে হওয়ায় পড়াশোনায় দীর্ঘ ২০ বছর বিরতি ঘটে। তারপর মেয়ে ইন্দ্রাণী পতির সঙ্গে মা দুলু মহান্তি আবার লেখাপড়া শুরু করেন এবং একসঙ্গে স্নাতক হন।

দুলুর কথায়, “বিয়ে হয়েছিল আমাদের গ্রামের পাটিডি গ্রামে। সংসার সামলাতে গিয়ে পড়াশোনা ছেঁড়েছি। মেয়ের যখন ক্লাশ টেন, হঠাৎ মাধ্যমিক দেওয়ার ইচ্ছে হলো। ভাবলাম চেষ্টা করে দেখি।”

ইন্দ্রাণী বলেন, “আমরা আমাদের গ্রামের হাইস্কুলে পড়তাম। এক শিক্ষকের পরামর্শে মা রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেন। ২০১৯ সালে আমরা দু’জন মাধ্যমিক পাশ করি। এরপর উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে ২০২১ সালে আমরা আবার পাশ করি—মা ৮৭ শতাংশ, আমি ৮৮ শতাংশ।”

মায়ের সঙ্গে মেয়ের এই পড়াশোনার রেষারেষি চলছিল। মায়ের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ইন্দ্রাণীও পড়াশোনা ছাড়েননি। তিনি বরাবাজার বিক্রম টুডু মেমোরিয়াল কলেজে শিক্ষাবিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হন, মা দুলু আর্টসে ভর্তি হন বলরামপুর কলেজে।

মায়ের কথায়, “আমি তখন পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম। মেয়েকে দেখে ইচ্ছে জাগল। জিজ্ঞাসা করতাম ওকে, সাহায্য চাই। চেষ্টা করেই দেখি।”

এই বছরের স্নাতক পরীক্ষায় দু’জনের মার্কশিট তুলতে গেলে ইন্দ্রাণী বলেন, “মায়ের হাসিমুখ দেখে এত ভালো লাগলো যে, তার সঙ্গে তুলনা হয় না।”

দুলুর শাশুড়ি পুতুলরানি পতিও বলেন, “বৌমা যদি আরও পড়তে চায়, আমরা সবাই পাশে আছি।” ইন্দ্রাণীর স্বামী শীতল মহান্তি যোগ করেন, “আমার শাশুড়ি প্রমাণ করেছেন, পড়াশোনার কোনো বয়স নেই। আমরা গর্বিত।”

বলরামপুর কলেজের অধ্যক্ষ্যা অনন্যা ঘোষ বলেন, “এটি আমাদের কলেজের জন্যও গর্বের বিষয়। পিছিয়ে থাকা এলাকার শিক্ষার ক্ষেত্রে মা-মেয়ের একসঙ্গে সাফল্য সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক।” জানা গিয়েছে, কলেজ মা-মেয়েকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *