রাবণ, তাঁর বীণা, আর সেই গান যা কাঁপিয়ে দিল স্বর্গকে

কথিত আছে, একবার রাবণ—লঙ্কার মহাশক্তিশালী রাজা—চেয়েছিলেন মহাদেব শিবের কাছে থাকতে। কিন্তু তিনি তাঁর প্রিয় লঙ্কা ত্যাগ করতে চাননি। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন শিবের বাসস্থান, কৈলাস পর্বতটাই তুলে নিয়ে যাবেন।

তিনি যখন কৈলাস তুলতে যান, মহাদেব শান্তভাবে নিজের পা রাখেন পর্বতের উপর, আর রাবণ চাপা পড়ে যান কৈলাস আর ধরিত্রী (পৃথিবী)র মাঝে। সেই যন্ত্রণা ছিল অসহনীয়। কিন্তু রাবণ কাঁদেননি বা চিৎকার করেননি। তিনি গেয়েছিলেন—একটি মহাশক্তিশালী স্তোত্র, যা আজও শ্রদ্ধার সাথে পাঠ করা হয়—শিব তান্ডব স্তোত্র।

“जटाटवीगलज्जलप्रवाह पावीतस्थले”


এই লাইনটি সেই স্তোত্রের শুরু। এই স্তোত্রে শিবের মহিমা ও রূপ বর্ণনা করা হয়েছে, ছন্দ আর শক্তিতে ভরপুর ভাষায়।

সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, রাবণ তখন বীণা বাজিয়েছিলেন—আর সেই বীণার তার ছিল তাঁর নিজের স্নায়ু (নার্ভ) দিয়ে তৈরি। এমন গভীর ভক্তি, এমন আত্মনিবেদন খুব কমই দেখা যায়।

শিব তান্ডব স্তোত্রের ছন্দ আর তাল মিলিয়ে চলে শিবের ডমরুর আওয়াজের সাথে। ডমরু দেখতে যেমন অনন্তের (∞) চিহ্নের মতো, তেমনি তার আওয়াজও প্রতিধ্বনি তোলে বিশ্বজগতে। এই স্তোত্র আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনে যত কিছুই হোক, শিব সব কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন।

এই কাহিনি শেখায়, কষ্টের মধ্যেও যদি ভগবানের দিকে মন দেওয়া যায়, তাহলে শক্তি, সুর আর শান্তি—সব পাওয়া সম্ভব। যেমনটা রাবণ করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *