সুবর্ণ জয়ন্তীর সুবর্ণ অধ্যায়: সর্বভারতীয় সঙ্গীত ও সংস্কৃতি পরিষদের ৫০ বছরের যাত্রাপথ

১৯৭৬ সালের ২৩শে জানুয়ারী, কলকাতার বুকে একদল সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের হাত ধরে জন্ম নিয়েছিল ‘সর্বভারতীয় সঙ্গীত ও সংস্কৃতি পরিষদ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সংস্থা এক অভূতপূর্ব সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেছিল।


প্রতিষ্ঠা ও পরিকাঠামো

অনেকবার অস্থায়ী ঠিকানা বদলে অবশেষে পরিষদ নিজস্ব স্থায়ী ঠিকানা পায় ‘সংস্কৃতি ভবন’, ১এ, যদুনাথ সেন লেন, কলকাতা-৭০০০০৬ ঠিকানায়। এটি এক সাংস্কৃতিক নিয়ামক সংস্থা হিসেবে কাজ করতে থাকে।


শিক্ষার প্রসার

চৌত্রিশটিরও বেশি Performing ও Fine Arts বিষয়ে প্রশিক্ষণমূলক পরীক্ষার মাধ্যমে পরিষদ ছয় লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী ও প্রায় ৬০০০ অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে শিক্ষাদান করে আসত। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছিল দুই কোটি।


আন্তর্জাতিক বিস্তার

পরিষদের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের ১৫টি দেশে। বেলজিয়াম, বাংলাদেশ, আমেরিকাসহ অনেক দেশে তারা ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার চালিয়ে যাচ্ছিল।


কাজল সেনগুপ্ত – এক নীরব প্রেরণা

পরিষদের সফলতার পেছনে ছিলেন এক নিরলস সাধক – প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও সংগঠক, সদ্যপ্রয়াত কাজল সেনগুপ্ত। তিনিই প্রমাণ করেছিলেন সংস্কৃতির মাধ্যমেও সম্মানের জীবন যাপন সম্ভব।


বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি

১৯৭৯ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যকলা বিভাগ থেকে স্বীকৃতি পায় পরিষদ। পরে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্যতাও লাভ করে। এতে ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা ও পেশাজীবনে সুবিধা পায়।


পরীক্ষার বাইরেও কার্যক্রম

পরীক্ষা ছাড়াও সারা বছরজুড়ে চিত্র প্রদর্শনী, শিল্পী সংবর্ধনা, কর্মশালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হত। শিল্পীদের নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হত দেশ ও বিদেশে।


সমাবর্তন অনুষ্ঠান

১১ বছরের শিক্ষা শেষে প্রতিবছর কলকাতার মহাজাতি সদনে বিশারদ ও রত্ন ডিপ্লোমা প্রদান করে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হতো। তবে…


সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ – ২০২৫

২০২৫ সালে পরিষদ তাদের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে পদার্পণ করে। বিশেষ এই বছরে ২৯ মার্চ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৃহৎ আকারে সমাবর্তন আয়োজন করা হয়েছিল। এতে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও শিল্পানুরাগীদের উপস্থিতি ছিল।


৫০ বছরের গৌরবময় সাংস্কৃতিক যাত্রাপথে সর্বভারতীয় পরিষদ জাতীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কাজল সেনগুপ্তর দেখানো পথে হাঁটতে হাঁটতেই এই যাত্রা আজও অবিরত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *