শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা,পরিবর্তনের পথে স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)

নতুন বিধিতে কঠোর পদক্ষেপ আধুনিকীকরণের প্রতিশ্রুতি

স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)-এর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুলশিক্ষা দপ্তর বড়সড় পরিবর্তনের পথে হাঁটল। সদ্য প্রকাশিত নতুন নিয়োগ বিধিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।


বিধিতে বড় পরিবর্তন: স্বাক্ষর প্রধান সচিবের

২০২৫ সালের মে মাসে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব বিনোদ কুমার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন বিধি প্রকাশ করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গভীর রাতে প্রকাশিত এই বিধি আশার আলো দেখাচ্ছে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীদের কাছে।


দুর্নীতির ইতিহাস সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ

২০১৬ সালের প্রায় ২৫,০০০ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর প্যানেল সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেয় SSC-তে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে। ওএমআর (OMR) শিটের মূল্যায়ন ও সংরক্ষণে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নিয়োগ হওয়ায় SSC বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে।


নতুন নিয়োগ ব্যবস্থার মূল দিকগুলি

. লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, ডেমো অভিজ্ঞতার সম্মিলন

নতুন নিয়োগ বিধিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে:

  • লিখিত পরীক্ষা
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • ইন্টারভিউ
  • ক্লাসরুম ডেমো অভিজ্ঞতা

এখানে ডেমো অভিজ্ঞতার জন্য বরাদ্দ ২০ নম্বর (প্রতিটিতে ১০ নম্বর করে)। এর ফলে চুক্তিভিত্তিক অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুযোগ পাবেন।


চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের জন্য বিশেষ সুযোগ

শুধু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো শিক্ষকরা নন, বরং রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে চুক্তিভিত্তিকভাবে পাঠদানকারী শিক্ষকরাও এবার স্থায়ী শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এতে শিক্ষক সংকটে ভোগা স্কুলগুলিও কিছুটা স্বস্তি পাবে।


স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রযুক্তির ব্যবহার

SSC-র নিয়োগে প্রথমবারের মতো ওয়েবসাইটে ইন্টারভিউ তালিকা প্যানেল প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগে এই তালিকা প্রকাশ না করায় অনেক প্রশ্ন উঠত। এখন থেকে নিয়োগে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা অনেকটাই বাড়বে বলে আশা।


ওএমআর সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা

ওএমআর ফর্ম সংরক্ষণ নিয়েও এসেছে বড় সিদ্ধান্ত:

  • হার্ড কপি সংরক্ষণ: ২ বছর
  • ডিজিটাল (স্ক্যানড) কপি সংরক্ষণ: ১০ বছর

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ এটি আদালতের তদন্ত বা আপিলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হয়ে উঠতে পারে।


আবেদনকারীদের স্বার্থে আরও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

  • ওএমআরএর ডুপ্লিকেট কপি সরাসরি প্রার্থীদের হাতে দেওয়া হবে।
  • মডেল উত্তরপত্র (Answer Key) ফল প্রকাশের আগে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
  • প্রার্থীরা চাইলে সেটিকে চ্যালেঞ্জও করতে পারবেন।
  • ১০টি শূন্যপদের জন্য SSC এবার ১৪১৬ জনের প্যানেল তৈরি করবে, যা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও নমনীয় ও কার্যকর করবে।

নতুন শুরু SSC-র জন্য

নিয়োগের নিয়মে এই আমূল পরিবর্তন শুধুই প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা। যেখান থেকে SSC নিজেদের হারানো বিশ্বাস ফিরে পেতে পারে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ন্যায্য ও দক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারে।

এই পদক্ষেপ শিক্ষকতা পেশাকে আরও সম্মানজনক ও স্বচ্ছ করে তুলবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *