হরিয়ানার ঝাঝরের খানপুর কলাঁ গ্রামের মেয়ে তপস্যা গেহলাওয়াত ইতিহাস গড়লেন আন্ডার-২০ বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে। বুলগেরিয়ার সামোকোভে অনুষ্ঠিত মহিলাদের ৫৭ কেজি বিভাগে নরওয়ের ফেলিসিটাস ডোমাজেভাকে ৫-২ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন ১৯ বছর বয়সী তপস্যা।
তপস্যার কুস্তির প্রতি ভালোবাসা আসে পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে। তাঁর প্রপিতামহ চৌধুরি হাজারি লাল ছিলেন একজন নামকরা গ্রামীণ কুস্তিগীর। তাঁর বাবা পারমেশ গেহলাওয়াত নিজেও এক সময় স্কুল গেমসে জাতীয় স্তরের কুস্তিগীর ছিলেন, তবে চোটের কারণে খেলা ছাড়তে হয়। তবু তিনি ঠিক করেন, তাঁর সন্তানকে কুস্তিগীর বানাবেন — ছেলে হোক বা মেয়ে। তপস্যাকে কুস্তি শেখানোর সিদ্ধান্তে পরিবারে আপত্তি থাকলেও পারমেশ দমে যাননি।
২০১৬ সালে তপস্যা প্রথমে গ্রামের এক স্থানীয় অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন। পরে ভালো সুযোগের খোঁজে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সোনিপতের যুধবীর আখড়ায়, কোচ কুলবীর রানার তত্ত্বাবধানে। দীর্ঘ দূরত্ব, পরিবারের সীমিত আর্থিক সামর্থ্য, এবং সমাজের কটুক্তি সত্ত্বেও তাঁর পরিবার তাঁকে পুরো সমর্থন জানায়। তপস্যার মা, শিক্ষক ড. নবীন কুমারিও ধীরে ধীরে মেয়ের স্বপ্নকে সমর্থন করতে শুরু করেন। পরিবারের ঋণ এখনো শোধ হয়নি, তবে তপস্যার সাফল্য সেই সমস্ত কষ্টকে অর্থবহ করে তুলেছে।
তপস্যার সাফল্যের পথ সহজ ছিল না। তিনি জুনিয়র রাজ্য ও জাতীয় খেতাব জিতেছেন, গত বছর থাইল্যান্ডে আন্ডার-২০ এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন হন। জাতীয় গেমসেও চ্যাম্পিয়ন হন তিনি এবং সিনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য নির্বাচিত হন।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে তিনি জাপানের সোভাকা উচিদাকে হারান, যিনি আগের ৪০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন। ফাইনালে নরওয়ের ইতিহাস গড়া কুস্তিগীর ডোমাজেভাকে হারিয়ে বিশ্ব মঞ্চে ভারতের পতাকা ওড়ান তপস্যা।
তাঁর এই সাফল্য শুধু একটি ব্যক্তিগত কীর্তি নয়, এটি একটি সামাজিক বার্তা — মেয়েরাও কুস্তিতে বিশ্বজয় করতে পারে। তপস্যার যাত্রা আজকের প্রজন্মের অনেক মেয়েকে সাহস ও অনুপ্রেরণা দেবে।