উত্তর কলকাতার হৃৎপিণ্ডে, কলেজ স্ট্রিট মোড় থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ধর্মস্থল—ঠনঠনিয়া কালী বাড়ি। এটি শুধু একটি মন্দির নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের ধারক। এই কালী মন্দিরে মা কালী বিরাজ করছেন ‘সিদ্ধেশ্বরী’ রূপে।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে সুতানুটি অঞ্চলের অরণ্যবেষ্টিত শ্মশানে উদনারায়ণ ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক মাটি দিয়ে গড়েন মা কালীর সিদ্ধেশ্বরী রূপ। এই দেবীমূর্তি তান্ত্রিক শক্তির প্রতীক এবং বহু সাধকের উপাসনার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
১৮৬০ সালে জনৈক শঙ্কর ঘোষ মন্দিরের মূল কাঠামো নির্মাণ করেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আটচালা শিব মন্দির ও কালী মন্দির। শঙ্করবাবুর উদ্যোগেই শুরু হয় নিত্যপূজার প্রচলন, এবং তাঁর পরবর্তী বংশধরেরাই আজও মন্দিরের সেবায়েত হিসেবে কাজ করে চলেছেন।
মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও এক চমকপ্রদ কাহিনি। বলা হয়, কামারপুকুর থেকে কিশোর গদাধর চট্টোপাধ্যায় (পরবর্তী কালে রামকৃষ্ণ পরমহংস) এই মন্দির সংলগ্ন ঝামাপুকুরে থাকতেন। দেবী মা নাকি শুনেছিলেন তাঁর গলায় গাওয়া ভক্তিমূলক গান, যা তাঁর সঙ্গে রামকৃষ্ণদেবের আধ্যাত্মিক সংযোগের অন্যতম নিদর্শন।
এলাকার নাম ‘ঠনঠনিয়া’ হওয়ারও একটি আকর্ষণীয় ইতিহাস আছে। পুরাকালে জঙ্গল ঘেরা এই অঞ্চলে সন্ধ্যায় দেবীর পূজার সময় মন্দির থেকে বাজনার ‘ঠনঠন’ শব্দ ভেসে আসত, সেই শব্দ থেকেই নাকি এই এলাকার নাম হয়ে ওঠে ‘ঠনঠনিয়া’।
বর্তমানে কালীপুজো, অমাবস্যা, কোজাগরী, এবং অন্যান্য বিশেষ তিথিতে এখানে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়। এই মন্দির শুধু আধ্যাত্মিক চর্চার কেন্দ্র নয়, এটি উত্তর কলকাতার গর্ব।