আজকের প্রযুক্তিনির্ভর যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্রুতগতিতে নানা শিল্পক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। মিউজিক, পেইন্টিং, সাহিত্য – সব ক্ষেত্রেই AI-র অংশগ্রহণ বাড়ছে। কিন্তু সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে: প্রযুক্তি কি শিল্পীর ‘মানবিক স্পর্শ’ বা আত্মিক যোগাযোগকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে? সম্প্রতি বিশিষ্ট সরোদশিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ আলি আকবর খানের পুত্রদ্বয় আমান আলি ব্যাংগাশ ও আয়ান আলি ব্যাংগাশ এই প্রসঙ্গে তাঁদের মূল্যবান মতামত জানালেন।
দুই ভাই স্পষ্ট করে বলেন,
মানবিক অনুভব আর আত্মিক অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই। সঙ্গীত শুধু সুরের সমষ্টি নয়— এটি হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের সংযোগ। আর সেটি কোনও মেশিন তৈরি করতে পারে না।
তাঁদের মতে, AI হয়তো তথ্য বিশ্লেষণ করে একধরনের ‘মিউজিক’ বানাতে পারে, কিন্তু সেটি কখনোই একজন শিল্পীর সাধনার ফল হতে পারে না। কারণ একজন শিল্পী তাঁর অভিজ্ঞতা, আবেগ, পারিপার্শ্বিকতা— সব মিলিয়ে একটি সৃষ্টিকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।
উত্তরাধিকারের ভার আর শিল্পীসত্ত্বার লড়াই
আমান ও আয়ান বেড়ে উঠেছেন এক গৌরবময় সংগীত পরিবারে, যেখানে তাঁদের পিতা আমজাদ আলি খান ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সংগীতের এক উজ্জ্বল নাম। সেই ঐতিহ্যকে বয়ে নিয়ে চলা এবং নিজেদের আলাদা পরিচয় গড়ে তোলা, দুটিই তাঁদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তাঁরা বলেন,
“আমাদের উত্তরাধিকার যেমন গর্বের, তেমনি এটি আমাদের কাঁধে একটা দায়িত্বও। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম যেন এই সংগীতকে অনুভব করে, ভালোবাসে।”
প্রযুক্তি হোক সহায়ক, প্রতিস্থাপক নয়
AI নিয়ে তাঁদের অবস্থান একেবারেই বিরোধিতা নয়। তাঁরা মনে করেন, প্রযুক্তি শিল্পীর সহায়ক হতে পারে, যেমনটা রেকর্ডিং সফটওয়্যার বা ডিজিটাল এডিটিং হয়ে থাকে। কিন্তু প্রযুক্তি যেন শিল্পীর জায়গা না নেয়।
তাঁরা বলেন,
“AI যেন মানুষের শিল্পচর্চাকে সম্পূর্ণ গ্রাস না করে ফেলে। একজন মানুষ যা অনুভব করতে পারেন, তা এখনও কোনও প্রযুক্তির সাধ্যে নেই।”
এই যুগে যেখানে প্রযুক্তি প্রতিদিন নতুন নতুন চমক নিয়ে আসছে, সেখানে আমান ও আয়ান আলি ব্যাংগাশ-এর মতো শিল্পীদের কণ্ঠে যখন মানবিকতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়, তখন বোঝা যায়— প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক না কেন, শিল্পের আসল প্রাণ থেকে যায় মানুষের হৃদয়ে।