সংঘর্ষবিরতির পর ট্রাম্পের চোখ কাশ্মীরে: ‘সমাধানের চেষ্টা করব’ মন্তব্যে আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন

সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাময়িক সংঘর্ষবিরতির পর এবার আন্তর্জাতিক নজর পড়েছে উপমহাদেশের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা—কাশ্মীর সংকটের দিকে। আর সেই উদ্যোগের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,

“কাশ্মীর সমস্যা দীর্ঘদিনের। যদি দুই পক্ষ চায়, আমি অবশ্যই সমাধানে সাহায্য করতে চাই। শান্তি চাই, যুদ্ধ নয়।”

এই মন্তব্যের পর স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে নতুন করে বিতর্ক ও আলোচনার ঢেউ। একদিকে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের প্রশ্ন, অন্যদিকে ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান—“কাশ্মীর অভ্যন্তরীণ বিষয়”—এই দুইয়ের সংঘাতে ফের উত্তপ্ত হচ্ছে কূটনৈতিক পরিসর।


সংঘর্ষবিরতির প্রেক্ষাপট

পাকিস্তানের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহের সামরিক উত্তেজনা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারত যুদ্ধবিরতির বার্তা দেয়। একপ্রকার অলিখিত শান্তির আবহ তৈরি হয়। তবে সেটা কতটা টেকসই, তা নিয়ে সন্দেহ ছিলই। এই আবহে ট্রাম্পের কাশ্মীর-হস্তক্ষেপমূলক মন্তব্য এক নতুন মাত্রা যোগ করল।


ট্রাম্পের অবস্থান: মধ্যস্থতা না প্রচার?

ট্রাম্প আগেও কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, তবে এবার যুদ্ধবিরতির পর তাঁর বক্তব্যকে অনেকেই দেখছেন ‘সময়োচিত কৌশল’ হিসেবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকদের মতে,

  • ট্রাম্প আসলে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের প্রভাব ধরে রাখতে চান।
  • ভারতের জনপ্রিয়তা এবং পাকিস্তানের সামরিক অবস্থানের মাঝে নিজেকে একজন “শান্তির দূত” হিসেবে তুলে ধরতে চান।
  • একইসঙ্গে মার্কিন ভোটব্যাঙ্কেও দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের প্রভাব রয়েছে—যার দিকেও নজর ট্রাম্পের।

ভারতের প্রতিক্রিয়া: অভ্যন্তরীণ বিষয়েই থাক কাশ্মীর

ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বলে এসেছে—কাশ্মীর পুরোপুরি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তাতে বাইরের কোনও মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক মুখপাত্র সংক্ষেপে জানান,

“আমরা কাশ্মীর বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ গ্রহণ করি না। এটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়।”

এই অবস্থান বজায় রেখে ভারত আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝাতে চায়, কাশ্মীর সমস্যা সন্ত্রাসবাদ ও পাকিস্তানের হস্তক্ষেপেই জটিল হয়েছে, কোনও ভূখণ্ড বিতর্ক নয়।


পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া: স্বাগত ট্রাম্পকে

অন্যদিকে, পাকিস্তান বরাবরই আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার পক্ষে। তারা কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘ, ওআইসি এবং এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য প্রত্যাশা করে। ট্রাম্পের মন্তব্যে তারা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক বিবৃতিতে বলেন,

কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনও উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।


কূটনৈতিক বিশ্লেষণ: শান্তির কথা, কিন্তু কৌশলের খেলাও চলছে

ট্রাম্পের এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে শোনাতে ভালো লাগে—শান্তির ডাক, সমাধানের ইচ্ছা। কিন্তু এর পেছনে কৌশলগত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও অস্বীকার করা যায় না।

  • কাশ্মীর সমস্যা জটিল এবং ঐতিহাসিক।
  • দুই দেশের আবেগ, ভূ-রাজনীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
  • তাই কোনও বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

কাশ্মীর সমস্যা যেন এক নিত্যপুরাতন আগ্নেয়গিরি—কখন বিস্ফোরণ হবে কেউ জানে না, আবার কখনও তা শান্ত দেখালেও ভিতরে ভিতরে ধিকিধিকি জ্বলছেই। ট্রাম্পের ‘সমাধানের চেষ্টা করব’ মন্তব্য শান্তির বার্তা হোক বা রাজনৈতিক বার্তা—ভারত ও পাকিস্তানের সামনে চ্যালেঞ্জ একটাই: কিভাবে টেকসই শান্তি আনা যায়, নিজের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রেখেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *