আজ, ৫ জুলাই (শনিবার), পালিত হচ্ছে উল্টো রথ বা বহুদা যাত্রা। আট দিনের সফর শেষে মাসি বাড়ি গুণ্ডিচা মন্দির থেকে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা ফিরছেন নিজ গৃহে — শ্রীমন্দিরে। আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে (২৭ জুন) শুরু হয়েছিল এই রথযাত্রার মহোৎসব। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন:
রথযাত্রা শেষে কী হয় এই বিশাল রথগুলির চাকাগুলোর?
এই চাকার কাঠ কাদের দেওয়া হয়?
চলুন জেনে নেওয়া যাক আজকের উল্টো রথ উপলক্ষে, এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
রথের নাম ও গঠনবৈশিষ্ট্য
- পুরীতে তিনটি রথ নির্মিত হয় প্রতিবছর:
- ‘নন্দীঘোষ’ – জগন্নাথদেবের রথ
- ‘তালধ্বজ’ – বলরামের রথ
- ‘দর্পদলন’ – সুভদ্রার রথ
- তিনটি রথের উচ্চতা, রঙ এবং চাকার সংখ্যাও আলাদা।
- নন্দীঘোষ – ১৬টি চাকা
- তালধ্বজ – ১৪টি চাকা
- দর্পদলন – ১২টি চাকা
- সব মিলিয়ে রথ তিনটিতে থাকে মোট ৪২টি শক্ত কাঠের তৈরি চাকা।
চাকার কাঠ কীভাবে ব্যবহৃত হয়?
- রথযাত্রা শেষ হলে, এই চাকাগুলো কেটে টুকরো করা হয়।
- এরপর সেগুলোকে নিয়ন্ত্রিত নিলামের মাধ্যমে ভক্তদের কাছে বিক্রি করা হয়।
- এই কাঠ বাড়িতে পবিত্র স্মারক হিসেবে রাখা হয়ে থাকে। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই কাঠ ঘর, পরিবার ও ব্যবসায় শুভ শক্তি আনয়ন করে।
আবেদন প্রক্রিয়া ও নিয়ন্ত্রণ
- এই কাঠ কিনতে হলে আগ্রহী ভক্তদের আগে থেকেই আবেদন করতে হয়, শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট মারফত।
- চাহিদা বেশি হওয়ায়, কিছু ক্ষেত্রে একটি কাঠের দাম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠে যায়।
- মন্দির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ ও যাচাই করা হয়, যাতে কাঠের অপব্যবহার না হয় এবং সেটি প্রকৃত ভক্তরাই পান।
রথের কাঠ কী কাজে লাগে?
- শুধুমাত্র স্মারক নয়, এই কাঠের ব্যবহার হয় প্রভুর মহাপ্রসাদ তৈরির কাজে।
- শ্রীমন্দিরের রান্নাঘরে, যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের জন্য প্রসাদ তৈরি হয়, সেই চুল্লিতে ব্যবহৃত হয় রথের কাঠ।
- কোনও কোনও সময় এই কাঠ ভক্তদের প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়, যা অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত।
রথের চাকা ও কাঠ শুধুই ধর্মীয় উপকরণ নয় — তা এক আস্থার প্রতীক, ঐতিহ্যের বাহক এবং ভক্তির রূপ। উল্টো রথে দেবতাদের মন্দিরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে এই রথগুলোর জীবনও শেষ হয়, তবে তাদের কাঠ-চাকা হয়ে ওঠে অন্য ভক্তের জীবনে এক নতুন সূচনা।